পূর্ব এশিয়ার বোর্নিও দ্বীপের উত্তর তীরে অবস্থিত ব্রুনাই দারুসসালাম। আরবের ছোট্ট একটি দেশ হলেও বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের নাম উচ্চারণ করতে ব্রুনাইয়ের সুলতানের নাম আসবেই।
বিশ্বজুড়ে টিকে থাকা সবশেষ রাজতন্ত্রগুলোর একটি হলো ব্রুনাই। এখানের সুলতান ‘হাসান আল বলকিয়া ইবনে ওমর আলি সাইফুদ্দিনের’ হাতেই সব নির্বাহী ক্ষমতা। তিনি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও অর্থমন্ত্রী এবং হেড অব ইসলাম। আবার সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবেও রয়েছে তার নাম। মূলত তার কথায় এখানকার আইন।
ইসলামি রাজতন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত এবং উন্নত নাগরিক জীবন আর শান্তির দেশ হিসেবেই ব্রুনাই বিশ্বে পরিচিত। এর পেছনের মূল কারণ হলো ছোট্ট এই দেশটির অফুরন্ত তেল ও গ্যাস সম্পদ। রাজতন্ত্র হলেও দেশটিতে সংবিধান রয়েছে। রয়েছে সংসদও। তবে কোনো নির্বাচন হয় না। সবশেষ এ দেশে নির্বাচন হয়েছিল ১৯৬২ সালে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর বিশ্বের দীর্ঘতম রাজত্ব এখন ব্রুনাই সুলতানের। তিনি ৫৫ বছর ধরে দেশটি শাসন করছেন, যেখানে কোনো বিরোধী দল নেই।
ব্রুনাই সুলতান থাকেন এক বিলাসবহুল প্রাসাদে, যার নাম ‘ইস্তানা নুরুল ইমান’। ২০ লাখ বর্গফুটের প্রাসাদটিতে রয়েছে ২২টি সোনার গম্বুজ, ১ হাজার ৭০০টি ঘর, ২৫৭টি বাথরুম এবং ৫টি বিশালকার সুইমিং পুল। প্রাসাদের ভেতরে সাজানো রয়েছে ৫৬৪টি ঝাড়বাতি। সুলতানের চমকপ্রদ এ প্রাসাদটি এরই মধ্যে স্থান পেয়েছে ‘গিনেস বুক অব রেকর্ডস’-এ। এ ছাড়া তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন পাউন্ড! তার কাছে অন্ততপক্ষে রয়েছে সাত হাজার গাড়ি। যার মধ্যে রয়েছে ৩৬৫টি ফেরারি, ২৭৫টি ল্যাম্বরগিনি, ২৩৭টি বিএমডব্লিউসহ দামি সব গাড়ি। আর তার এই বহুমূল্যের গাড়িগুলো নিরাপদে রাখার জন্য সুলতানের প্রাসাদে রয়েছে ১১০টি গ্যারাজ।
এদিকে সুলতানের ভাই জেফরিসহ রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও ব্যাপক অপচয় আর বিলাসী জীবনের অভিযোগ রয়েছে। ২০০০ সালে আদালতের কাগজপত্রে দেখা যায় ‘প্রিন্স জেফরি বলকিয়া’ বিলাসী জিনিসপত্র কেনার পেছনে ১০ বছরে খরচ করেছেন ২.৭ বিলিয়ন ডলার।
এ ছাড়া ব্রুনাইয়ের গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করতে পারে না। আর কেউ ‘সীমা লঙ্ঘন’ করে সরকারবিরোধী কিছু করলে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে গণ্য করা হয়, যার শাস্তি অত্যন্ত কঠিন। যার দরুন বিদেশি সাংবাদিকদেরও কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এদিকে সুলতানের সম্পত্তির নিয়ে আলোচনা করার নানা বিধিনিষেধ রয়েছে দেশটিতে। তবে জনগণ বর্তমানের শাসনব্যবস্থা নিয়ে খুব সন্তুষ্ট। তাদের মতে, তারা বেশ নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারছে। সুলতান জানিয়েছেন, বর্তমানে তার হাতে দেশের সব ক্ষমতার এই শাসনব্যবস্থা হয়তো সামনে রাখবেন না। ভবিষ্যতে দেশের শাসনব্যবস্থায় নাগরিকদের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।