ছবি: সংগৃহীত
কুলদীপ লাখানি, ভারতীয় একজন তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। সম্প্রতি ‘ট্যালেন্ট ক্যাটাগরিতে’ সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা পেয়েছেন তিনি। গত ১৫ বছর ধরে প্রযুক্তি শিল্পে কাজ করা ৩৬ বছর বয়সী লাখানি জানান, আমিরাতের স্থিতিশীল উন্নত আবাসন এবং ক্যারিয়ার গড়ার স্বাধীনতাই তাকে গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন করতে উৎসাহিত করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দক্ষ কর্মীদের জন্য ‘গেম চেঞ্জার’ হতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই গোল্ডেন ভিসা।
প্রযুক্তিসহ অন্যান্য খাতে কর্মরত প্রতিভাবান কর্মীদের আকৃষ্ট করতে, ধরে রাখতে এবং তাদের পুরস্কৃত করার জন্য ২০১৯ সালে গোল্ডেন ভিসা প্রোগ্রাম চালু করে আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ। এই ভিসার মেয়াদ ১০ বছর।
বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা, মেধাবী শিক্ষার্থী, বিশেষ প্রতিভা সম্পন্ন ব্যক্তি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা গবেষকরা গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত ইতালীয় ফ্যাশন ডিজাইনার জিওর্জিও আর্মানি থেকে শুরু করে বলিউড স্টার শাহরুখ খান, অন্য অনেক সেলিব্রিটি এবং ফ্রন্টলাইন অনেক মেডিকেল কর্মীও গোল্ডেন ভিসা পেয়েছেন।
অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে দক্ষ কর্মীদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে চলতি বছর ‘নির্বাচিত’ বিদেশি নাগরিকদের জন্য ১০ বছরের গোল্ডেন ভিসা প্রোগ্রাম চালু হয়েছে বাহরাইনেও।
আরব আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা পাওয়া ভারতীয় তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ কুলদীপ লাখানির মতে, এ ধরনের ভিসা নিয়োগকর্তার সঙ্গে কর্মীকে আরও ভালো অবস্থানে রেখে নিজেকে ‘স্পন্সর’ করার সুযোগ দেয়। ট্যালেন্ট ক্যাটাগরির অধীনে ‘প্রকৌশল ও বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি।
লাখানি বলেন, প্রযুক্তি খাতে কাজ করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো-অফিসে না গিয়েও কাজ করার সুযোগ থাকে। গোল্ডেন ভিসা থাকায় প্রয়োজন অনুসারে আমি যেকোনো সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভ্রমণ করতে পারব। এর আরেকটি সুবিধা হলো-পরবর্তী ১০ বছরের জন্য আর ভিসা নবায়ন করতে হবে না।
ভারতীয় এই প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জানান, প্রাথমিক মনোনয়নের পর তিনি দুবাইয়ের ‘আমির সেন্টারের’ মাধ্যমে গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন করেন। পুরো প্রক্রিয়া অর্থাৎ রেসিডেন্সি ফি, আমিরাতের আইডি, মেডিকেল পরীক্ষা, শিক্ষার নথিপত্র যাচাই, আগের ভিসা বাতিল এবং অন্যান্য কাজের জন্য তার মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৬ হাজার দিরহাম। তবে আবেদনকারীর কর্মযোগ্যতা এবং শিক্ষার ওপর নির্ভর করে এই খরচ কম-বেশি হয়। মনোনয়ন ও ভিসা প্রক্রিয়ায় প্রায় দুই থেকে তিন মাস সময় লাগে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের নিয়োগকর্তারা অভিজ্ঞ কর্মীদের আকৃষ্ট করতে এবং বিদ্যমান কর্মচারীদের ধরে রাখার জন্য অন্যান্য প্রণোদনার পাশাপাশি গোল্ডেন ভিসা দেয়ার কথা বিবেচনা করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রযুক্তি খাতে নিয়োগ কার্যক্রম গতিশীল হয়েছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ডিজিটাল পরিকল্পনা ত্বরান্বিত করছে এবং বৈশ্বিক প্রযুক্তি সংস্থাগুলো ধীরে ধীরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তাদের কর্মকাণ্ড বাড়াচ্ছে।
সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মার্কিন পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান মার্সারের জুলাইয়ের জরিপ অনুসারে, দুবাইয়ের প্রযুক্তি খাতের কর্মীরা বিশ্বব্যাপী এ শিল্পে তৃতীয় সর্বোচ্চ উপার্জনকারী। ন্যূনতম তিন বছরের অভিজ্ঞতা আছে দুবাইয়ের এমন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা লন্ডন, আমস্টারডাম এবং বার্লিনের মতো বৈশ্বিক প্রযুক্তি কেন্দ্রগুলোর ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি উপার্জন করেন।
এছাড়াও দক্ষ কর্মীর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের ই-কমার্স খাতেও নিয়োগ বাড়ছে।
গোল্ডেন ভিসা পেয়ে বর্তমানে আমিরাতের আল আইনে বাস করছেন সুদানের উদ্যোক্তা এবং একাডেমিক গবেষক ৩৬ বছর বয়সী সুহা গ্লাল। তিনি ‘হুদহুদ টেকনোলজিস’ নামে আইটি-ভিত্তিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং সফটওয়্যার উন্নয়নবিষয়ক পরামর্শদাতা একটি কোম্পানির মালিক।
এই উদ্যোক্তা বলেন, ১০ বছরের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসের অনুমতি পাওয়ার পাশাপাশি আমি এখন আমার পরিবারের সদস্যদেরও স্পনসর করতে পারব। এছাড়া গোল্ডেন ভিসা বৈধ রাখতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাইরে থাকার সর্বোচ্চ সময়কালের ওপর এখন কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। পিএইচডি করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাইরে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে এটি আমার জন্য খুবই সহায়ক।
শুধু তাই নয়, গোল্ডেন ভিসাপ্রাপ্ত কর্মীরা একইসঙ্গে একাধিক কোম্পানির সঙ্গে কাজ করারও সুযোগ পাচ্ছেন। এর আগে, শুধুমাত্র ভিসায় উল্লেখিত সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতে পারতেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া বেশ সহজ। কাজের অভিজ্ঞতার সনদ এবং অন্যান্য প্রশাসনিক নথি জমা দেয়ার পর দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব।
সূত্র: দ্য ন্যাশনাল