পৃথিবী থেকে কয়েক কোটি মাইল দূরের গ্রহাণুকে আঘাতের মাধ্যমে এটিকে তার নিজ কক্ষপথ থেকে সরাতে সক্ষম হয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) মহাকাশযান ডার্ট। শুধু তাই নয়, এটিকে কয়েকটি টুকরায় ধ্বংস করতেও সক্ষম হয়েছে ডার্ট। মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে এ কথা জানায় নাসা। ‘সেভ দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামে এ অভিযানকে যুগান্তকারী উল্লেখ করে এটি সফল হয়েছে বলেও দাবি সংস্থাটির।
গেল ২৬ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ‘ডিমরফস’ নামে এক গ্রহাণুকে সজোরে আঘাত করতে সক্ষম হয় নাসার ‘ডার্ট’ মহাকাশযান। এতে সেখানে অনেক গর্ত তৈরি হয়, মহাকাশের বিশাল অংশে ধুলা ও ধ্বংসস্তূপ ছড়িয়ে পড়ে; যা দেখতে অনেকটা ধূমকেতুর মতো। আঘাতের সময় এটি থেকে আলোর ঝলকানিও দেখা গেছে।
মহাকাশযানের আঘাতে ৫২৫ ফুটের ওই গ্রহাণুতে কী প্রভাব পড়ল, চিলি ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে শক্তিশালী টেলিস্কোপের সাহায্যে তা পর্যবেক্ষণ করে নাসা। অবশেষে দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ শেষে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে নাসা জানায়, যুগান্তকারী এ অভিযানের মধ্য দিয়ে গ্রহাণুর কক্ষপথ পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো মানুষ কোনো গ্রহাণুর কক্ষপথে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে বলেও দাবি করেন নাসার পরিচালক।
তিনি বলেন, ‘ঘণ্টায় প্রায় ১৪ হাজার মাইল গতিতে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছিল গ্রহাণু ডিমরফস। বিজ্ঞানীরা গ্রহাণুটির প্রদক্ষিণ সময় প্রায় ৩২ মিনিট কমিয়ে আনতে সক্ষম হন। এতে শেষ পর্যন্ত এর কক্ষপথ পরিবর্তনে সফল হই আমরা। যুগান্তকারী এ অভিযান প্রমাণ করে যে মহাবিশ্ব পৃথিবীর দিকে যা-ই ছুড়ে দিক না কেন, তা প্রতিহত করতে প্রস্তুত হচ্ছে নাসা।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নাসার এমন যুগান্তকারী সফল অভিযান মহাকাশবিজ্ঞানীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ভবিষ্যতে উপযুক্ত সময়ে এ ধরনের আরও অভিযান পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করবেন তারা। যদিও অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর দিকে মহাকাশীয় কোনো বস্তুর আঘাত হানার সম্ভাবনা কম দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
ডাবল অ্যাস্টেরয়েড রিডাইরেকশন টেস্ট বা ডার্ট মহাকাশযান তৈরি ও সেভ দ্য ওয়ার্ল্ড অভিযান পরিচালনায় নাসার খরচ হয়েছে প্রায় ৩২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার।