ফাইল ছবি
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর এতদিন জাতিসংঘে ভোটাভুটি থেকে কার্যত বিরত থেকেছে ভারত। এবার তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিল।
কয়েকদিন আগেই পূর্ব ইউক্রেনের লুহানস্ক, দনেৎস্ক, খেরসন ও ঝাপোরিজ্ঝিয়াকে তাদের অংশ বলে ঘোষণা করেছে রাশিয়া। সেই ঘোষণাকে ‘বেআইনি’ ঘোষণা করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে নিন্দাপ্রস্তাব আনা হয়েছিল। রাশিয়ার দাবি ছিল, এই প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি গোপন ব্যালটে হোক। খোলাখুলি ভোট যেন না হয়। এই দাবি নিয়েই ভোটাভুটি হয়। সেখানে ভারত রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেয়।
ভারত ছাড়া আরো ১০৬টি দেশ রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। ৩৯টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। তার মধ্যে রাশিয়া ও চীন আছে। অর্থাৎ, রাশিয়া নিজেও নিজের আনা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়নি। মাত্র ১৩টি দেশ রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদ প্রথমে বিষয়টি নিয়ে ভোটাভুটির উদ্যোগ নেয়া। রাশিয়ার ভেটোর জন্য সেখানে আর ভোটাভুটি হয়নি। ভারত সেখানে ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিষয়টি আসে। সেই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাশিয়া যেন ওই চারটি এলাকা থেকে পিছনে সরে যায়। কোনো দেশ যেন এই অঞ্চলগুলিকে রাশিয়ার অংশ বলে স্বীকৃতি না দেয়। এই প্রস্তাব নিয়েই রাশিয়া গোপন ভোটের দাবি করেছিল। তা খারিজ হয়ে গিয়েছে। এবার সেই প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হবে।
জাতিসংঘে ভারত রাশিয়ার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি ভারত তাদের অবস্থান বদল করছে? নাকি, ভারত যে টাইটরোপ ওয়াক করছে এটা তারই একটা উদাহরণ?
সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। সেখানে আমাদের স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে। ভারতে রাশিয়ার অস্ত্র আছে। তার সংখ্যা বেড়েছে। কয়েক দশক ধরে পশ্চিমা দেশগুলি আমাদের অস্ত্র সরবরাহ করেনি। তারা প্রতিবেশী দেশের সামরিক ডিক্টেটরকে অস্ত্র দিয়েছে। আমরা ভবিষ্যতের স্বার্থ ও বর্তমান পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।
বরখা দত্তের ইউ টিউব চ্যানেলে সাবেক কূটনীতিক বিষ্ণু প্রকাশ বলেছেন, আমাদের কোর স্ট্যান্ড বহাল আছে। আমরা মনে করি, সকলের সার্বভৌমত্ব যেন বজায় থাকে। আমরা কোনো কড়া কথা বলিনি। কূটনীতির ভাষায় সবসময় কড়া কথা বলার দরকার হয় না। আমাদের অবস্থান নিয়ে কোনো অস্পষ্টতা নেই।
কিন্তু সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ভারত রাশিয়ার যুদ্ধাস্ত্রের উপর নির্ভরশীল। তারা আমাদের প্রচুর যুদ্ধবিমান দিয়েছে, সামরিক ইঞ্জিনিয়ারিং সামগ্রী দিয়েছে। এমন নয় যে, ভারত পশ্চিমা দেশগুলি থেকে সমরাস্ত্র বা সরঞ্জাম পায়নি। কিন্তু অ্যামেরিকা ও ন্যাটো দেশগুলি কখনোই সর্বশেষ প্রযুক্তির সমরাস্ত্র দেয়নি। অ্যামেরিকা আমাদের এফ ১৬ দিয়েছিল। তারা সর্বশেষ প্রযুক্তির এফ ১৬ দেয় জাপান, পাকিস্তানকে।
উৎপল ভট্টাচার্যের মতে, রাশিয়ার সমরাস্ত্র দামে সস্তা ও তারা তাদের সর্বশেষ প্রযুক্তির জিনিস দিয়েছে। তাহলে ভারত কেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিল? সাবেক লেফটান্যান্ট জেনারেলের মতে, এটাকে ভারসাম্যের নীতি বা ব্যালেন্সিং অ্যাক্টের আরেকটা নিদর্শন হিসাবে ধরতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তো কিছুদিন আগে পুতিনকে বলেই দিয়েছেন, যুদ্ধ কোনোকিছুর সমাধান করতে পারে না। তাই যুদ্ধ হলো বাতিল ধারণা মাত্র।
তবে প্রবীণ সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, ভারত যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে, তা চাপের মুখে পড়ে। রাশিয়া যা করছে তা কোনো সভ্য দেশ করতে পারে না। তারা যেভাবে ইউক্রেনের উপর আক্রমণ করছে, তাকে সমর্থন করা খুবই কঠিন। আর এখন এনিয়ে পশ্চিমা দেশের চাপও ভারতের উপরে অনেক বেড়েছে। সেই চাপের মুখে ভারত এই কাজ করেছে।
দীপ্তেন্দ্রের মতে, ভারত বরাবরই রাশিয়ার ক্ষেত্রে এরকম নীতি নিয়ে চলে। এর আগে তারা যখন আফগানিস্তানে অভিযান করেছিল, তখনো ভারত একই নীতি নিয়েছিল। সৌজন্যে : ডয়চে ভেলে