মন্দার কবলে পড়লে বিশ্বের ৩৫ কোটি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ। বিশ্বে ৪৮টি দেশের প্রায় ৪ কোটি মানুষ এখন আছে চরম খাদ্য সংকটে। আইএমএফ বলছে, এর মধ্যে কোস্টারিকা, বসনিয়া ও রুয়ান্ডার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।
করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আর মোড়ল দেশগুলোর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা বিশ্বকে ঠেলে দিচ্ছে ঝুঁকির মধ্যে। এরই মধ্যে এই সংকটের আঁচ লেগেছে ছোট-বড় সব অর্থনীতির দেশে। আগামী বছর বিশ্বে মহামন্দা জেঁকে বসতে পারে–আবারও এমন সতর্কতা দিল উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ। সংস্থা দুটি বলছে, জ্বালানির চড়া দাম ও লাগামহীন মূল্যস্ফীতিতে সৃষ্টি হবে খাদ্যঘাটতি। এ সংকট থেকে মানুষকে বাঁচাতে সরকারগুলোকে সতর্ক হওয়ার তাগিদ তাদের।
আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, করোনার পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তার ওপর প্রতি মহাদেশে জলবায়ু দুর্যোগ মানুষের জীবনযাত্রাকে অসহনীয় করে তুলেছে। কেননা, এ সময় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লেও, বাড়েনি উপার্জন। এ অবস্থায় যেসব দেশ প্রবৃদ্ধির দিকে তারাও এ সুফল অনুভব করছে না। আমরা দেখেছি তিন দেশের এরই মধ্যে ৪৫ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য সংকটে। এ কারণে শিশু, নারী ও পুরুষরা মারা যেতে পারেন। এখন শক্তিশালী খাদ্য নিরাপত্তার বলয় নিয়ে ভাবতে হবে।
আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক বলছে, উন্নয়নশীল দেশের জন্য মন্দা হবে ভয়াবহ। সংকট এড়াতে তাই মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার পরামর্শ তাদের। বার্ষিক সম্মেলনের চতুর্থ দিনে বিশ্বব্যাংক প্রধান জানান, গরিব মানুষকে নিয়ে শঙ্কার কথা।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিস ম্যালপাস বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি এখন রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলো। ২০২৩-এ বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে যে ১ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়ানোর কথা বলা হচ্ছে তাতে দেখা গেছে, এ সময় জনসংখ্যাও বাড়ছে ১:১ হারে, ফলে এই প্রবৃদ্ধির সুফল পাবে না মানুষ; বরং ৭ কোটি মানুষ এরই মধ্যে হতদরিদ্রের কাতারে যে নেমেছে তা বাড়তে পারে। এটি মহামন্দার বিপজ্জনক অবস্থার কাছাকাছি বলছি আমরা। এই সবকিছুর মূলে রয়েছে জীবনযাত্রার বাড়তি খরচ।
তিনি আরও বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থপ্রবাহ কমায় মানুষের হাতে অর্থপ্রবাহও কমেছে। আমাদের এখন গরিবদের জন্য চিন্তা করতে হবে । হতাশার কথা হলো, সম্পদ বা মূলধন কিছু মুষ্টিমেয় দেশকেন্দ্রিক, সেখান থেকে সহায়তা বা ঋণ হলেও তা পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর জন্য বরাদ্দ দিতে হবে। বিশ্বব্যাংকও তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
আইএমএফ প্রধান মনে করেন, জ্বালানি সংকট আগামী দিনের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি ঠিক করবে। সংকট সামাল দিতে তাই মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির সতর্ক সমন্বয়ের তাগিদ দেয়া হয়েছে।