ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের মাহাত্ম্য এমনই যে, ক্রিকেট বিশ্বে যার রেশ থেকে যায় অনেক দিন। চলতি বিশ্বকাপেও দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর রোমাঞ্চকর লড়াই শেষ হয়ে গেলেও আলোচনা যেন থামছেই না। বিশেষ করে বিরাট কোহলির ইনিংসটি নিয়ে চলছে চুল-চেরা বিশ্লেষণ।
গত ২৩ অক্টোবর মেলবোর্নে প্রায় লাখখানেক দর্শকের সামনে অনবদ্য এক ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন কোহলি। দীর্ঘসময় অফফর্মের সঙ্গে লড়াই করা বিশ্বের অন্যতম সেরা এ ব্যাটার সেদিন দলের চাপের মুখে ৫৩ বলে অপরাজিত ৮২ রানের এক হার না মানা ইনিংস খেলেন। তার ইনিংসটিতে ছিল ৬টি চার ও ৪টি ছয়, যার প্রতিটিই কোনো না কোনোভাবে দৃষ্টিনন্দন, কখনো কবজির মোচড়ে বল সীমানার বাইরে, আবার কখনো হাতের জোরে তা পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন বোলারের মাথার ওপর দিয়ে।
মোটামুটি অসম্ভব বনে যাওয়া সেই ম্যাচটি ভারত শেষ পর্যন্ত জিতে নেয় ৪ উইকেটে। অবধারিতভাবে কোহলি হন ম্যাচসেরা। ম্যাচশেষে এক প্রতিক্রিয়ায় খোদ কোহলি জানিয়েছিলেন, ‘আমি বাকরুদ্ধ। কোনো ভাষা নেই আমার। কীভাবে এটা ঘটেছে, তা-ও জানি না। এই ইনিংসের আগেও আমি ভাবতাম অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইনিংসটিই ছিল আমার ক্যারিয়ারসেরা। কিন্তু আজ থেকে সেখানে পাকিস্তানের বিপক্ষে ইনিংসটি।’
ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে ৯০ বা তার বেশি রানের তিনটি ইনিংস খেলেছেন বিরাট কোহলি, করেছেন সেঞ্চুরিও। কিন্তু তার কাছে এতদিন ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮২ রানের ইনিংসটিই ছিল সেরা। সেরার প্রশ্নে বদল এসেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮২ রানের ইনিংসটিই এখন তার কাছে সেরা।
কোহলির নিজের কথাতো অনেক শোনা হলো, এবার অন্যরা কি বলছেন শুনি। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান গ্রেগ চ্যাপেল তার দেশের সংবাদমাধ্যম সিডনি মর্নিং হেরাল্ড-এ কোহলির ইনিংসটি নিয়ে একটি কলাম লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, পবিত্র ভগবত গীতা হিন্দু ধর্মের সংশ্লেষণ। ভগবত গীতা নামটার অর্থ হয় ‘ঈশ্বরের গান’। টি-টোয়েন্টিতে যত ইনিংস আছে, তার মধ্যে কোহলির এ ইনিংসটি ‘ঈশ্বরের গান’-এর কাছাকাছি।
অস্ট্রেলিয়ান এই গ্রেটের মতে, সুন্দর ব্যাটিংয়ে কোনোরকম ছাড় না দিয়ে প্রতিপক্ষকে যেভাবে পিষে ফেলেছেন কোহলি, তা আগের যুগের গ্রেটরাও করতে পারত না। আমি জীবনে যত ক্রিকেট দেখেছি, তার মধ্যে আর কেউ এই ইনিংসের মতো এতটা শিল্পিত ব্যাট করতে পারেনি।
আরও বলেন, ব্যাটিংয়ের শৈল্পিকতার দিক থেকে যদি বলি, গত ১৫ বছরে যত ইনিংস দেখেছি তার মধ্যে সেরা এটি। খুব আনন্দ পেয়েছি, আর এটা এমন একজন খেলেছেন, যিনি টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৫ বছরের ইতিহাসে এই সংস্করণের অন্যতম কট্টর সমর্থক এবং অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ও।
পাকিস্তানের দেয়া ১৫৯ রান তাড়া করতে নেমে ৩১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ভারত। একটা সময় মনে হচ্ছিল খুব সহজেই পাকিস্তান জিততে চলেছে। উইনিং প্রেডিকশনও কথা বলছিল বাবরদের হয়ে। তবে এদিন মেলবোর্নের সব আলো নিজের করে নিয়েছেন কোহলি। হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে জুটি গড়ে একসময় অসম্ভব মনে হওয়া ম্যাচটা দুর্দান্ত জয়ে রূপ দেন। কোহলি ধীরে ধীরে আড়মোড়া ভেঙে হাত খুলে খেলা ইনিংসটি যেন চিত্রকরের তুলির আঁচড়!
বিশেষ করে ১৯তম ওভারে হারিস রউফের শেষ দুই বলে কোহলি যে দুটি ছক্কা মারেন, সাবেক ক্রিকেটার ও কোচ রবি শাস্ত্রীর চোখে তা, ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের খেলা অন্যতম সেরা শট।