গুয়ানতানামো বে বন্দিশিবিরের সবচেয়ে বয়স্ক বন্দি সাইফুল্লাহ পারাচাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত বন্দিশিবিরে প্রায় দুই দশক ধরে বিনা বিচারে বন্দি থাকার পর তাকে ছেড়ে দেয়া হলো। মুক্তি পাওয়ার পর ইতোমধ্যে ৭৫ বছর বয়সী সাইফুল্লাহ তার নিজ দেশ পাকিস্তানে ফিরে এসেছেন।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) সাইফুল্লাহর মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এদিন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাইফুল্লাহ পারাচাকে দেশে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। আমরা খুশি যে বিদেশে বন্দি একজন পাকিস্তানি নাগরিককে অবশেষ তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া গেছে।’ তার মুক্তিতে আলাদাভাবে টুইট করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি।
ধনী ব্যবসায়ী সাইফুল্লাহকে ২০০৩ সালে থাইল্যান্ডে আটক করা হয়। এরপর তাকে কিউবার গুয়ানতানামো বন্দিশিবিরে বন্দি রাখা হয়। প্রাথমিকভাবে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও গোষ্ঠীটিকে অর্থায়নের অভিযোগ করা হয়েছিল।
কিন্তু সাইফুল্লাহ বরাবরই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে কখনই কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়নি। ফলে আটকাবস্থা চ্যালেঞ্জ করার মতো আইনি সক্ষমতা তার ছিল না।
অবশেষ গত বছর মে মাসে তাকে ছেড়ে দেয়ার অনুমোদন হয়। কিন্তু এরই মধ্যে কেটে গেছে ১৯টি বছর। যা তার জীবন কেড়ে নেয়া হয়েছে। তিনি ছিলেন গুয়ানতানামোতে বন্দি নম্বর ১০৯৪। কোনো অপরাধ না করেও তাকে সেখানে নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হয়েছে।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার হামলার এক বছর পরই কিউবার গুয়ানতানামো নামক স্থানে গোপন বন্দিশিবির গড়ে তোলে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
প্রধানত আফগানিস্তান আগ্রাসনকালে আটক বন্দিদের রাখার জন্য গুয়ানতানামো বন্দিশিবির প্রতিষ্ঠা করা হয়। চালু করার পর প্রায় ৭৮০ বন্দিকে এখানে রাখা হয়েছিল। এরমধ্যে ৭৩২ জনকে অন্য কোথাও পাঠানো হয়েছে নতুবা ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ৩৮ জন বন্দি সেখানে রয়ে গেছে। এরমধ্যে ৯ জন জিজ্ঞাসাবাদের সময় মৃত্যুবরণ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের আগে বলেছিলেন তিনি ভয়ংকর এবং কুখ্যাত জেল বন্ধ করে দেবেন তবে ক্ষমতা গ্রহণের পরেও এখনও তা কার্যকর হয়নি।
সাইফুল্লাহ পারাচা বসবাস করতেন যুক্তরাষ্ট্রে। নিউইয়র্ক সিটিতে ব্যবসার মাধ্যমে বহু সম্পদের মালিক ছিলেন তিনি। পাকিস্তানেও ছিলেন সম্পদশালী একজন ব্যবসায়ী। নাইন ইলেভেন হামলার দুই বছর পর ২০০৩ সালে তাকে থাইল্যান্ড থেকে আটক করা হয়। ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গুয়ানতানামো বন্দিশিবিরে তাকে আটকে রাখে।
মার্কিন কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তিনি আল কায়েদার সদস্য। নাইন ইলেভেন সন্ত্রাসী হামলার দুটি ষড়যন্ত্রে তিনি সহায়তা করেছেন। কিন্তু বার বার সন্ত্রাসে জড়িত থাকার কথা সাইফুল্লাহ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, যাদের সঙ্গে তার দেখা-সাক্ষাৎ হতো তারা আল কায়েদার সদস্য কিনা সে বিষয়ে তিনি জানতেন না।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে, যুদ্ধের আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে কোনো অভিযোগ ছাড়াই কাউকে তারা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আটকে রাখতে পারে।
সাইফুল্লাহ পারাচাকে গ্রেফতারের আগে তার এক ছেলে উজাইর পারাচা’কে গ্রেফতার করে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের অভিযোগ, তার ছেলে ভুয়া ডকুমেন্ট ব্যবহার করে সন্দেহজনক জঙ্গীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সহায়তা করেছেন। নিউইয়র্কের ফেডারেল কোর্ট ২০০৫ সালে তাকে ৩০ বছরের জেল দেয়।
কিন্তু ২০২০ সালের মার্চে একজন বিচারক সাক্ষীদের দেয়া বক্তব্য ছুড়ে ফেলেন। উজাইর পাকিস্তানের অভিজাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইন্সটিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন থেকে গ্রাজুয়েশেন সম্পন্ন করেন। তার বিরুদ্ধে মার্কিন সরকার নতুন করে কোনো অভিযোগ বা বিচারের সিদ্ধান্ত না থাকায় ২০২১ সালে উজাইরকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়।