বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতাদের ব্যর্থতার কারণে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উত্থান। মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করার দাবি জানান।

‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে ‘বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম, ডা. মেহেদী হাসান ও ডা. সায়ীদ মেহবুব উল কাদিরের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, ডা. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, ডা. শহিদুল আলম, ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. মো. আদনান হাসান মাসুদ প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “দেশের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ৭ নভেম্বর, যা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯৭২-৭৫ পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা দেশের গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছিল। এরপর দেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল। তাদের নেতা আক্ষেপ করে বলেছিলেন: ‘সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেলাম চোরের খনি।’ সে সময় দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছিল। রক্ষী বাহিনীর মাধ্যমে ৩০ হাজার লোককে হত্যা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছিল। ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা কারা ঘটিয়েছে, এটা পরবর্তী সরকার যারা প্রতিষ্ঠা করেছে, সেখানে পরিষ্কার হয়ে গেছে।”

তিনি আরও বলেন, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে আরেকটি আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে। এরপর ২ নভেম্বর রাত থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণে আরেকটি অভ্যুত্থান ঘটে। এ সময় জিয়াউর রহমানকে পদত্যাগে বাধ্য করে ও তাকে বন্দি করে। অনেক ঘটনা পাল্টা-ঘটনা ঘটে। সে সময় ৩-৬ নভেম্বর পর্যন্ত সরকার ছিল না। রেডিও, টিভি বন্ধ ছিল। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হারিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন শুরু হয়েছিল।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ঠিক সে সময় ৭ নভেম্বর দেশের সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সিপাহি-জনতাই জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু আওয়ামী লীগ এই দিনকে গুরুত্ব না দিয়ে ‘মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস’ পালন করছে। আসলে তারা পরিবর্তন সহ্য করতে পারে না। আমাদের নেতা জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সহ্য করতে পারে না।

তিনি বলেন, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে একটি আধুনিক উন্নত ও স্বনির্ভর দেশ গড়তে মনোনিবেশ করেন জিয়াউর রহমান। তিনি সেনাবাহিনীকে আধুনিকায়ন করেন। আজ আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানকে সহ্য করতে পারে না। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করছে।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, আজও দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে অবৈধ ভোট ডাকাতির সরকার। তারা অর্থ পাচারের মাধ্যমে দেশকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছে। আমার যেসব বিষয় নিয়ে এতদিন বলে আসছি। আজ আইএমএফ কিন্তু সেগুলো নিয়ে ঠিকই প্রশ্ন করছে। কেন তেলের দাম বেড়েছে? কেন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ হয় না? আর আজ গায়ের জোরের প্রধানমন্ত্রী বলছেন দেশে দুর্ভিক্ষ আসবে।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এই সরকার এমনিতে যাবে না। আইয়ুব খান যায়নি। এরশাদ যায়নি। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের বিদায় হয়েছে। তেমনি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান হবে।