‘এ জীবন তোমার-আমার, প্রোটিন সবার অধিকার’; ‘ডিম মাংস দুধ খেলে, সকল প্রকার পুষ্টি মেলে’; ‘বিশ্বকাপ একদিন আমরাই নেব, ভাতের সাথে প্রোটিন খাব’- এমন স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল কুষ্টিয়া শহরের আজকের সকাল।
উজ্জ্বল হলুদ রঙের টি-শার্ট পরিহিত কুষ্টিয়া জেলা স্কুলের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর দীর্ঘ সাইকেল শোভাযাত্রা উৎসুক করে তুলেছিল কুষ্টিয়ার সাধারণ মানুষের। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের সামনে থেকে শুরু হওয়া এ র্যালি শহরের পাঁচমাথা হয়ে পুনরায় প্রাণিসম্পদ অফিসে এসে শেষ হয়।
বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি), কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস এবং ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) যৌথভাবে এ শোভাযাত্রার আয়োজন করে।
সাইকেল শোভাযাত্রার প্রধান অতিথি কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, সুস্থ জীবন লাভ করতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। লম্বা, শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান হতে হলে, দীর্ঘ জীবন লাভ করতে হলে ডিম, দুধ, মাছ, মাংস ইত্যাদি পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, অনেকেই নানা কাজে অর্থ অপচয় করেন কিন্তু তার সামান্য অংশ খরচ করলেই একটি ডিম কিংবা এক গ্লাস দুধ কিনতে পারা যায়। তিনি বলেন, প্রোটিন খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস তৈরি করতে হবে। পরিবারে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান দিতে হবে, তবেই জাতি হিসেবে আমরা উন্নত হতে পারব।
কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিদ্দীকুর রহমান বলেন, ভাতের ওপর আমরা অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। প্রোটিন আমাদের শরীরের জন্য কতটা জরুরি তা অনেকেই জানি না। প্রধানমন্ত্রী অপুষ্টির অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করতে বদ্ধপরিকর। সে কারণেই তিনি ভাতের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন। মূলত, এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতেই প্রোটিন সচেতনতা বাড়াতে সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এ হয়ে কাজ করছে।
মাত্র ১১-১২ টাকায় একটি ডিম পাওয়া যায় জানিয়ে ইউএসএসইসি’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি খবিবুর রহমান কাঞ্চন বলেন, ‘দেশে কম দামের প্রোটিনের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। মাত্র ১১-১২ টাকায় একটি ডিম পাওয়া যায়। কিন্তু সয়াবিন দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবার অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং দামেও সস্তা। প্রতিবেশি দেশগুলো বেশ জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে তা এখনও জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি।’ তাই দুর্মূল্যের বাজারে সয়াবিনও হতে পারে প্রোটিনের ভাল উৎস।
বিপিআইসিসি’র সেক্রেটারি দেবাশিস নাগ বলেন, আমরা একটি সংকটময় সময়ের মধ্য দিয়ে চলেছি। আমাদের এ প্রিয় পৃথিবী খাদ্য সংকট ও অর্থ সংকটের মাঝে পড়তে যাচ্ছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। অপুষ্টির হার যেন না বাড়ে, মানুষ যেন তার নূন্যতম খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। ডিম, দুধ, মাছ, মাংস যেন সাধারণ মানুষের সাধ্যের নাগালে থাকে সেজন্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। ডলার সংকটের কারণে প্রাণিখাদ্যের অত্যাবশ্যকীয় উপকরণসমূহের আমদানি বন্ধ কিংবা বাধাগ্রস্ত হলে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটবে। তাই এ ধরনের পণ্য আমদানিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের মত প্রোটিনও আমাদের মৌলিক অধিকারের অংশ। এ অধিকার সবার জন্য নিশ্চিত করতে হবে। ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রোটিন কনজাম্পশন অনেকটাই বাড়াতে হবে। সেজন্য বেসরকারি উদ্যোক্তারা কাজ করছেন, সরকার সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছেন।
বিপিআইসিস এবং ইউএসএসইসি প্রোটিন সচেতনতা বাড়াতে দেশব্যাপী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলা শহরে সচেতনতামূলক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে, পর্যায়ক্রমে সারা দেশেই এ কার্যক্রম বিস্তৃত করা হবে।