প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেলের ফলে আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বলসহ অর্থনীতি গতিশীল হবে।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে টানেলের একটি টিউবের উদ্বোধন শেষে একথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশকে বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময় হিসেবে দেখা হয়। অথচ আমাদের আগে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা এ দেশের উন্নয়ন চায়নি। যার ফলে দেশটা এগোতে পারেনি। গত ১৪ বছরে এ দেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার কাজটিই করেছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি করেছি। এতে অনেক উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করেছি। কিছুদিন আগে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছি, নিজস্ব অর্থায়নে আমরা যে পারি তা দেখিয়ে দিয়েছি। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করেছি। এটা চট্টগ্রামের মেয়র মহিউদ্দিন সাহেবেরও দাবি ছিল।’
আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল চট্টগ্রামের গুরুত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি বিশ্বে বাড়াবে বাংলাদেশের মর্যাদা। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় নানা পরামর্শ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী দেশের সমুদ্র সম্পদ আহরণসহ চট্টগ্রাম-কক্সবাজারকেন্দ্রিক আরো কিছু মেগা প্রকল্পের ভাবনা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে একটা টানেল হয়েছে দেখে এখনই উদ্বোধন করছি না। আমার ইচ্ছা ছিল দেখার যে, কেমন হলো। মনটা পড়ে রয়েছে চট্টগ্রামে। দ্বিতীয় টিউবের কাজও শেষ; সামান্য কাজ বাকি। বিরাট কাজ বলে মনে করি। টানেল নির্মাণে যারা জড়িত, সবাইকে ধন্যবাদ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিরোধীরা সরকারের উন্নয়ন দেখতে পায় না, তাই তাদের চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে। আমরা অনেক ভালো আই ইন্সটিটিউট করে দিয়েছি। আমি বলব তাদের সেখানে চোখের ডাক্তার দেখাতে। তারা উন্নয়ন দেখতে পায় না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের অপজিশন বোধহয় চোখ থাকতে অন্ধ। তারা দেখেও না দেখার ভান করে। নিজেরা কিছু করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও কিছু করতে পারবে না। দেশকে কিছু দিতেও পারবে না। হ্যাঁ, ক্ষমতায় বসে নিজেরা খেতে পারবে। অর্থ চোরাচালান করতে পারবে। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান করতে পারবে। অর্থ-অস্ত্র চোরাচালানি, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ; এগুলো পারবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। এটাই হলো বাস্তবতা।’
কৃষিতে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি জমি রক্ষা করতে হবে। কৃষি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, নতুন নতুন বীজ উদ্ভাবন করা হচ্ছে, উৎপাদন বাড়ছে। আমাদের যার যতটুকু জমি আছে; কিছু না কিছু উৎপাদন করতে হবে। তাহলে আমরা অর্থনৈতিক মন্দার অভিঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারব।
তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী একটি জাতি। আমরা বিশ্বের কাছে হাত পেতে, ভিক্ষা চেয়ে চলব কেন? বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলব।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে স্থাপিত টানেলের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নদীর তলদেশ থেকে টানেল বিদেশে দেখেছি। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় এটাই প্রথম। চট্টগ্রাম একসময় অবহেলিত ছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর ব্যাপক কাজ করেছি। টানেল স্থাপনের ফলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশের প্রথম এই টানেল নির্মিত হচ্ছে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায়। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই মেগা প্রকল্প। এখন চলছে টানেলের ভেতরে ফায়ার ফাইটিং, লাইটিং ও কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনার কাজ। পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে প্রকল্পের গাড়িও। নদীর তলদেশে হওয়ায় যেকোনও সময় পানি জমতে পারে আশঙ্কায় টানেলের মধ্যে বসানো হচ্ছে ৫২টি সেচ পাম্প। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
টানেলে নদীর তলদেশে স্থাপন করা হয়েছে দুটি টিউব। একটি টিউবে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে বিকল্প পথে গাড়ি চালানো যায়, সেটিরও কাজ চলছে। বাতি ও পাম্প স্থাপন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরির কাজও সমানতালে চলছে। নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক, ৭৭২ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার। এখন চলছে কর্ণফুলীর দক্ষিণ প্রান্তে আনোয়ারা অংশে টোল প্লাজা নির্মাণের কাজ।