ছবি- সংগৃহীত
নির্ঝঞ্ঝাট দেশ হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে সুপরিচিত জাপান। কিন্তু চলমান বৈশ্বিক সংকট ও মেরুকরণে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আচরণে এক রকমের উভয় সংকটে আছে দেশটি।
জাপানের নিরাপত্তা ইস্যুগুলো সবচেয়ে বেশি জড়িত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। অন্যদিকে দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় অংশীদার চীন। শান্তিপূর্ণ দেশ হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের চলমান অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বে নিরপেক্ষ থাকতে রীতিমতো ঘাম ঝরাতে হচ্ছে জাপানকে।
জাপান তার নাগরিকদের আর্থিক ও সামরিক নিরাপত্তা দিতে সবসময় সচেষ্ট। দুই দিক রাখতে গিয়ে সারা বিশ্ব যখন সুদের হার বাড়াচ্ছে, তখন জাপান এ হার কমিয়ে কর্মীদের বেতন বাড়ানোর জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
সম্প্রতি বার্তা সংস্থা ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, জাপানের বিখ্যাত মাছের বাজার তিয়োসি মার্কেটে সরবরাহ ও পণ্যের দাম বাড়লেও ভোক্তা পর্যায়ে এ দাম এখনও বাড়ানো হয়নি। বাজার জরিপ করে দেখা যায়, পণ্যের দাম ৯ দশমিক ১ শতাংশ বাড়ানো হলেও মূল্যস্ফীতি এখন ৩ দশমিক ৬ শতাংশে রয়েছে। মূলত জাপানের এ মূল্যস্ফীতিকে ঋণাত্মক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা বলছেন, জাপানের নাগরিকরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে পরিচিত নয়। হঠাৎ দাম বাড়িয়ে দিলে আদৌ তারা পণ্য কিনবে কি না, এ ব্যাপারে সন্দেহ আছে। যারা চাকরি করছেন এখনও তাদের বেতন বাড়ানো হয়নি। বেতন বাড়লে পণ্যের দাম বাড়ানো যেতে পারে।
আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কে আরও কড়াকড়ি আরোপ করতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে গেলে জাপানের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার চীনের সঙ্গে ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে। এতে বৈশ্বিক এ সংকটে কর্মীদের বেতন বাড়ানো ও পণ্যের দাম ঠিক রাখা জাপানের জন্য মুশকিল হয়ে যাবে।
বাজার ঠিক রাখার পাশাপাশি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা দেশটির প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করেছেন। বর্তমানে জাপানের প্রতিরক্ষা ব্যয় প্রায় রাশিয়ার সমান। প্রতিরক্ষা খাতকে শক্তিশালী রাখতে জাপানের সবচেয়ে বড় ভরসা এখন যুক্তরাষ্ট্র।
জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সাম্যাবস্থা বজায় রাখতে ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ এমন দশা হয়েছে জাপানের। তবে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক সমানুপাতিকভাবে চালিয়ে যেতে পারলে এমন উভয় সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে দেশটি–এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।