ফেনী সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পাকা ভবন নির্মাণে হিড়িক পড়েছে। তবে সরকারি অনুমোদনের তোয়াক্কা করছেন না ভবন মালিকরা। এতে ব্যাংক ঋণসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হবেন তারা। এমনকি নির্মাণ ত্রুটিসহ কোনো অঘটন হলে আইনি জটিলতায়ও পড়তে হতে পারে।
ফেনী সদর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার বাইরে গ্রামে বসতঘর নির্মাণের আগে সরকারি নির্দেশনা ও বিধি-বিধান জারি আছে। পাকা ও আধাপাকা ভবন নির্মাণের আগে উপজেলা প্রশাসন থেকে অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই নির্মাণ হচ্ছে এসব বসতবাড়ি।
উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে বসতবাড়ির প্ল্যান অনুমোদন বিষয়ক কমিটি আছে। তবে এ পর্যন্ত ১২টি ইউনিয়নে বাড়ি নির্মাণের আগে মাত্র ৫৭ জন অনুমোদন নিয়েছেন। অথচ এর থেকে অনেক বেশি পরিমাণ নির্মাণ হয়েছে পাকা-আধপাকা বাড়ি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভবন নির্মাণের আগে প্ল্যানসহ উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করতে হবে। এর সঙ্গে সরকারের নির্ধারিত ফি কোষাগারে জমা দিতে হবে। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই বাড়ি নির্মাণে অনুমোদনের বিষয়ে এখনো জানেন না। আবার অনেকে জেনেও গড়িমসি করছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের তদারকির অভাবকে দায়ী করছেন অনেকে। কেউ কেউ অনুমোদন নিতে গিয়ে ভোগান্তির অভিযোগও তুলেছেন।
ধর্মপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল হোসেন সাহেদ বলেন, ‘গ্রামে নতুন ঘর নির্মাণে সরকারি অনুমোদন নিতে হয় তা জানা ছিল না। স্থানীয় মিস্ত্রি দিয়ে ঘর নির্মাণ করেছি। এ বিষয়ে কেউ তদারকিও করতে আসেনি।’
কালিদহ ইউনিয়নের বাসিন্দা সফি খান বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে পাকা ভবন নির্মাণ করেছি। কেউ জিজ্ঞাসা করতে আসেনি। এখন শুনছি নির্মাণ ত্রুটিসহ কোনো অঘটন হলে আইনি জটিলতায় পড়তে হবে। ব্যাংক ঋণসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধাও পাওয়া যাবে না। এখন ইউনিয়ন থেকে যোগাযোগ করে অনুমোদন নেবো।’
লেমুয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা এম এমরান পাটোয়ারী বলেন, ‘বাড়ি নির্মাণের আগে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনাপত্তিপত্র নিয়েছি। এখন শুনছি উপজেলা পরিষদের অনুমোদনও নিতে হবে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অনুমোদনের জন্য আবেদন জমা দেবো।’
মোতাহের হোসেন নামের এক আবেদনকারী বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনাপত্তিপত্রের পর উপজেলা পরিষদে প্ল্যানসহ আবেদন করেছি। উপজেলা পরিষদ থেকে পাস পেতে দীর্ঘ সময় লাগে। এতে আবেদনকারীরা কিছুটা ভোগান্তির শিকার হন।’
কাজিরবাগ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগ বলেন, বাড়ির মালিকদের অনেককে বলা হলেও তারা এ ব্যাপারে উদাসীন।
কালিদহ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ডালিম বলেন, গ্রাম পর্যায়ে নতুন বসতঘর নির্মাণে সরকারি অনুমোদন নিতে হয় তা অনেকেই জানেন না। তারা স্থানীয় মিস্ত্রি দিয়ে ঘর নির্মাণ করছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মৃৎসুদ্দি বলেন, বাড়ি করার ক্ষেত্রে অনুমোদন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে অগ্নিনির্বাপণে বাড়িতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের পথসহ যেকোনো দুর্ঘটনারোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী বলেন, আমার যোগদানের পর ভবন নির্মাণ কমিটির একটি সভা হয়েছে। পর্যাপ্ত আবেদন জমা না পড়ায় সভা কম হচ্ছে। একটি পাকা স্থাপনা প্ল্যান মাফিক নির্মাণ করতে হয়। সেখানে গ্রাম পর্যায়ে প্ল্যান ছাড়া ও অনুমোদন না নিয়েই স্থাপনা নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়ে ভবন নির্মাণ কমিটির কার্যক্রম জোরদারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ফেনী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীল বলেন, সরকারি অনুমোদন ছাড়া বাড়ি নির্মাণ করলে পড়ে যেকোনো ধরনের আইনি জটিলতায় পড়তে হবে। এজন্য বাড়ির মালিকদের অনুমোদনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। শুধু তাই নয়, অনুমোদন নেওয়ার বিধি কার্যকর করতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদেরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাড়িসহ স্থাপনা নির্মাণে অনুমোদনের ফাইল নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে হয় না। আবেদন দিলেই প্ল্যান যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেওয়া হয়। আগামীতে অনুমোদন ছাড়া ভবন নির্মাণের বিষয়টি মাঠ পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে তদারকি হবে।