কারখানায় ব্যস্ত এক নারী শ্রমিক
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি বন্ধসহ ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হোসিয়ারি গার্মেন্টস শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। এছাড়া অর্ডার না থাকায় লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।
তৎকালীন পাকিস্তান আমলে নারায়ণগঞ্জের উকিলপাড়া, নয়ামাটি ও দেওভোগ এলাকায় কারখানা গড়ার মাধ্যমে হোসিয়ারি ব্যবসার যাত্রা শুরু হয়। স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে ছোট বড় কয়েক হাজার কারখানা ও শোরুম গড়ে ওঠে। আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় হোসিয়ারি শিল্পটি রফতানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পে রূপান্তরিত হয়। সেখানে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
তবে মহামারি করোনার ধাক্কা সামলে উঠার পর আবারও ধস নেমেছে এ শিল্প খাতে। সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কাঁচামাল আমদানি করতে না পারা, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া এবং দেশের ব্যাংকগুলো এলসি সুবিধা না দেয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
তার ওপর শীত মৌসুম উপলক্ষে অধিকাংশ কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা লোকসানের আতঙ্কে আছেন।
এক হোসিয়ারি গার্মেন্টস মালিক বলেন, অর্ডার অনেক কমে গেছে। আগে যে পরিমাণে বিক্রি হতো, বর্তমানে তার এক ভাগও নেই। এ অবস্থা চললে, যে কোনো সময়ে আমাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে।
এদিকে কারখানাগুলোতে কাজ কমে যাওয়ায় শ্রমিকদের রোজগারও অনেক কমে গেছে। তারা বলেন, সুতার দাম বেড়ে গেছে। এর জন্য মালিকরা আগের মতো সুতা কিনতে পারছেন না। পাশাপাশি আমাদের কাজও কমে গেছে। আমরা আর্থিকভাবে অনেক কষ্টে আছি। ঘরভাড়া, সন্তানের স্কুল, সব কিছু নিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এ অবস্থায় সরকারের প্রতি ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়াসহ এলসি সুবিধার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল।
তিনি বলেন, এত কাগজপত্রে ঝামেলা না করে, শুধু সহজ শর্তে, স্বল্প সুদে এবং অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে যদি একটি ঋণের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
উল্লেখ্য, সরকার অনুমোদিত এক হাজার ২০০ হোসিয়ারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশনের অন্তর্ভূক্ত। তবে এর বাইরে আরো দশ হাজারের বেশি কারখানা পরিচালিত হচ্ছে।