চিনি | ফাইল ছবি
মাসের পর মাস ধরে বাজারে চলা চিনির সংকট যেন কোনোভাবেই কাটছে না। এরইমধ্যে আবার খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, চিনি কিনতে হলে কিনতে হচ্ছে অন্য পণ্য। শুধু তাই নয়, ডিলার পয়েন্টেই খুচরা দামে প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে।
নিত্যপণ্যের বাজারে চিনির বেচাকেনা চলছে ‘টাকা দিলে কি না মেলে’ তত্ত্বে। তাদের কথায় এটি পরিষ্কার যে চিরচেনা খোলা চিনির বাজার হালচাল স্বাভাবিক নেই।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) কারওয়ান বাজারে চিনি না পাওয়ার বিষয়ে এক ক্রেতা বলেন, আমি গত পরশু দিন আমাদের এলাকায় ১৪৫ টাকা দরে চিনি কিনেছি। কিন্তু কারওয়ান বাজারে এসে চিনি পাচ্ছি না।
যদিও পাইকারদের কেউ কেউ জানালেন, বেশি টাকা দিলেই খোলা চিনি মিলছে। এক ব্যবসায়ী বলেন, কোনো পণ্যেরই অভাব নেই। খালি টাকা নিয়ে আসেন। শুধু টাকা একটু বেশি দিতে হবে। টাকা দিলে চিনি পাওয়া কোনো ব্যাপারই না।
প্রায় আড়াই মাস ধরে চলা এই সংকটের বাজারে খুচরা বিক্রেতারা এবার অভিযোগের নতুন ডালা মেলে ধরেন। ডিলার পয়েন্ট থেকেই খুচরা দামে প্যাকেটজাত চিনি কিনতে হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন শর্ত জুড়ে দেয়া হচ্ছে, চিনি কিনতে হলে কিনতে হবে অন্য কোনো পণ্য।
বিক্রেতাদের অভিযোগ, ডিলাররা বলছেন যে চিনি নিলে আটা নিতে হবে। আবার চিনি নিলে তেলও নিতে হবে। এছাড়া চিনি আমাদের গায়ের রেটে কিনতে হয়েছে। তাহলে আমরা কত দামে বিক্রি করবো?
এদিকে এ দায় কোম্পানির ওপর দিয়ে এক ডিলার বলেন, কোম্পানি আমাদের মুনাফা কম দিচ্ছে। এতে লেবার কস্ট দিয়ে আমাদের তেমন মুনাফা হচ্ছে না। তাই গায়ের রেটে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বাজারে যখন এমন অবস্থা, তখন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমানের পরিষ্কার দাবি, মিল থেকে চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।
তিনি বলেন, চাহিদামাফিক সরবরাহের ক্ষেত্রে আমরা আগেও যা দিয়েছি, এখনও তাই দিচ্ছি। আমরা দৈনিক যা উৎপাদন করছি, সবগুলোই বাজারে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
বাজারে চলমান সংকটের বিষয়ে তিনি জানান, চিনি মিল থেকে সরাসরি বাজারে আসে না। আসে কয়েক হাত বদল হয়ে আসে। তাই বিপণন কাঠামোতে হাত বদলের কোথায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে, তা খুঁজতে হবে।
গোলাম রহমান বলেন, সরকারের দেখতে হবে যে মিল কত বিক্রি করছে, আর খুচরা ব্যবসায়ীরা কত বিক্রি করছে। এই যে দামে পার্থক্য, কোথায় এ সমস্যাটি তৈরি হচ্ছে। কোথায় দামে নিয়ে কারসাজি বেশি হচ্ছে। সেই জায়গাগুলোকে ঠিক করতে হবে।
সরবরাহ ব্যবস্থাপনাকে চোখে চোখে রাখতে পারলে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট কেটে যাবে বলে মনে করে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. এম এ ইউসুফ। তিনি বলেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেই মূলত ঘাটতি রয়েছে। যার সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। দেখা যাচ্ছে তারা পণ্য মজুত করে রাখে, তারা বেশি দামে বিক্রি করছে।
আগামী দিনের চাহিদা বিবেচনায় চিনিসহ নিত্যপণ্যের আমদানি প্রক্রিয়া ব্যাংকগুলোতে স্বাভাবিক রয়েছে কি না, সে দিকেও সরকারকে নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।