ফুটবল বিশ্বকাপ জোয়ারে মাতলেও নেত্রকোনায় খেলাধুলা চর্চার জন্য নেই পর্যাপ্ত মাঠ। ফলে খেলার সুযোগ না থাকায় স্কুল-কলেজ শেষে শিশু-কিশোররা ঝুঁকছে মোবাইল ফোনে। আবার কেউ কেউ পাড়া-মহল্লায় মাদকসেবনসহ অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে।
এতে অভিভাবকরা যেমন আতঙ্কিত তেমনি সমাজের সুশীল নাগরিকরাও শঙ্কিত। আর এসবের জন্য বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাকে।
স্থানীয়রা জানান, শহর গ্রাম কোথাও নেই কোনো খেলার কোনো মাঠ। যে দু’চারটা মাঠ কাগজে-কলমে পাওয়া যায় সেগুলো বেশির ভাগই দখলে। কোনো কোনো মাঠে বাজার বসানো হয়েছে। আবার কোনো মাঠের জায়গায় মালিকরা প্লট করে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার কোনো মাঠে বছরজুড়ে মেলাসহ রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেই ব্যস্ত থাকে। যে কারণে ছেলেমেয়েরা খেলতে পারে না। নেত্রকোনা জেলা থেকে শেষ কবে ফুটবল ম্যাচে জাতীয় পর্যায়ে খেলোয়াড় নিয়েছিল তা কেউ বলতে পারেন না। এমন দৈন্যদশা জনপ্রিয় এই খেলাটির।
নেত্রকোনার একমাত্র সাতপাই স্টেডিয়াম মাঠটি ছিল খেলোয়াড় তৈরির একমাত্র ভরসাস্থল। আধুনিক স্টেডিয়াম তৈরি করতে গিয়ে একেবারে খেলাই বন্ধ ছিল কয়েক বছর। এরপর যদিও স্টেডিয়ামটি নির্মিত হয়েছে কিন্তু সাধারণদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। কোনো টুর্নামেন্ট হলে খেলা হয়, না হলে বন্ধ থাকে। এটিতেও বছর তিনেক ধরে মেলা চলে। এ ছাড়া আছে ধন নীলমণি শহরের ঐতিহাসিক মোক্তারপাড়া ঈদগাহ মাঠ। এটি সারা বছর সরকারি বিভিন্ন মেলাসহ বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও রাজনৈতিক সভা সমাবেশ কনসার্ট বা শিল্পকলার অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
নেত্রকোনা আবু আব্বাস ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও বিতর্ক চর্চা কেন্দ্রের পরিচালক নাজমুল কবীর সরকার বলেন, নেত্রকোনা শহরে স্কুল কলেজের বাইরে মাঠ এবং সুস্থ বিনোদন কেন্দ্রের অভাব রয়েছে। বিকেলে মাঠের অভাবে শিশুরা খেলাধুলা করতে পারে না। খেলায় থাকলে শিশুদের শরীর স্বাস্থ্যও ভালো থাকতো তাদের মানসিক বিকাশও ঘটতো। এই সুযোগ যেহেতু নেই, ফলে শিশু কিশোররা মোবাইলের দিকে ঝুঁকে যায়। নানা অনৈতিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পরে। বিভিন্ন গ্রুপে গ্রুপে আড্ডাবাজিতে তাদের গ্যাং এ পরিণত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হলে খেলার মাঠগুলো উন্মুক্ত করতে হবে। এর পাশাপাশি বাড়াতে হবে মাঠের সংখ্যাও।
নেত্রকোনা জেলার সুজনের সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন জন উদ্যোগের সম্পাদক প্রবীণ সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল জানান, মোক্তারপাড়ার মাঠ এবং পুরাতন কালেক্টরেট চত্বর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকে। মেলাসহ নানা কর্মসূচিতে বছরজুরে মাঠে নানা আয়োজন চলে। এই শহরে এখন আর খেলাধুলার চর্চা নেই। বিকাশ ঘটছে না ক্রীড়াঙ্গনের। ফুটবলসহ কোনো খেলারই প্রসার ঘটছে না। কোনো পাড়া-মহল্লায় সুযোগ পাচ্ছে না শিশু কিশোর। মাদকমুক্ত সমাজ গঠন করতে চাইলে অবশ্যই মাঠের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
এ বিষয়ে নেত্রকোনা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক সাইদুর রহমান বলেন, আমরা স্টেডিয়াম মাঠে ক্রিকেটের পিচ করার কাজ করছি। এ ছাড়া মোক্তারপাড়া মাঠেটি ফুটবল খেলার জন্য ব্যবস্থার কথা ভাবছি।
দীর্ঘদিন ধরে মাঠগুলোতে সর্বসাধারণের খেলার সুযোগ না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে তিনি সামনা সামনি কথা বলবেন বলে জানান।