পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেছেন, চলতি মাসেই রাজধানীতে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েছে দ্বিগুণ। দিনভর কুয়াশাচ্ছন্ন মনে হলেও আসলে তা ধোঁয়াশা। সম্প্রতি সময় সংবাদকে এ কথা বলেন তিনি।
শীতের শুরুতে আবহাওয়া শুষ্ক থাকার কারণে বাতাসে বাড়ছে ধূলিকণার পরিমাণ। খালি চোখে তাই কুয়াশা মনে হলেও আসলে তা ধুলা আর কুয়াশার মিশ্রণ ধোঁয়াশা। অপরিকল্পিত নির্মাণ আর অনিয়ন্ত্রিত যানবাহনের ধোঁয়াই এর প্রধান কারণ।
এ বিষয়টি নিয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, কাগজ-কলমের নিয়ম মানতে বাধ্য করা গেলেই কমে আসবে দূষণের মাত্রা। এদিকে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) বায়ুর গুণমান এবং দূষণ শহরের র্যাংকিংয়ে প্রথম স্থানে পৌঁছে গেছে ঢাকা।
চলতি মাসে প্রায় প্রতিদিন ভোর থেকে সকালের সূর্যের আলোর তীব্রতা না বাড়া পর্যন্ত প্রথম দেখায় রাজধানীর রাস্তা বা খোলা জায়গা দেখে মনে হতে পারে শীতের কুয়াশ ভেদ করে ছুটে চলা নগর জীবন। তবে গল্পটা এখানে ভিন্ন রকমের। এ মাসের শুরু থেকে একটু শীত শীত ভাব সকাল থেকেই কুয়াশাচ্ছন্ন নগর দেখা যায়। বেলা বাড়লেও খুব একটা তেজ আসে না সূর্যের। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাকে কুয়াশা ভাবলেও পরিবেশ গবেষকরা বলছেন ধোঁয়াশা।
সাধারণত বায়ুর প্রতি ঘনমিটারে অতিক্ষুদ্র ধূলিকণার মানমাত্রা ৬৫ মাইক্রো গ্রাম। তবে রাজধানীর বেইলি রোডের ব্যস্ততম সড়কে গত সোমবার দুপুরে এর মাত্রা ছিল ১৬০ থেকে ২০০ মাইক্রো গ্রাম, যা গত মাসেও ছিল সহনীয় মাত্রার কাছাকাছি। এ মাসে তা বেড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় বাতাসে ধুলার পরিমাণ বাড়ে। সেক্ষেত্রে নির্মাণ প্রকল্প আর যানবাহনের ধোয়াই এটি বাড়ার প্রধান কারণ।
পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, যে মানমাত্রা রয়েছে পরিবেশ অধিদফতর থেকে সেটি হলো ৬৫ মাইক্রো গ্রাম তার প্রায় তিনগুণের বেশি রয়েছে ঢাকা শহরের বায়ুমানে ধুলা। ঢাকা শহরের এরকম একটি কেন্দ্রে (বেইলি রোড) আমরা এ পরিস্থিতি লক্ষ্য করছি। মূলত যেখানে নির্মাণকাজ এবং ইটের ভাটা রয়েছে সেখানে দুষণের মাত্রা দ্বিগুণ। মূলত চলতি মাসেই রাজধানীতে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েছে দ্বিগুণ।
এ মৌসুমে বৃষ্টি না থাকায় পুরো সময়টাতেই থাকতে হয় কুয়াশা আর ধুলার মিশেল ধোঁয়াশায় বলেও জানান তিনি।
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বড় বড় মেগাপ্রজেক্ট থেকে শুরু করে আমাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে ভবনগুলো তৈরি হচ্ছে বা রাস্তায় যে খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে সব জায়গাতে দেখা যাবে কোথায় কোনো আচ্ছাদন নেই, পুরো কাজ হচ্ছে উন্মুক্তভাবে। সরকারকে অবশ্যই এটা স্বাস্থ্য ঝুঁকি মনে করে ধুলা দূষণটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আর যারা মনিটরিংয়ে দায়িত্বে আছেন তাদের জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে।
সেক্ষেত্রে নগর কর্তৃপক্ষ আর পরিবেশ অধিদফতরকে আরও তৎপর না হলে আবারও শঙ্কা থাকবে বায়ুদূষণের তালিকায় ঢাকার নাম তালিকার ওপরে ওঠার।