চলতি বছরের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের (উত্তরা-আগারগাঁও অংশ) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন ছিদ্দিক জানিয়েছিলেন, চলতি ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের সুবিধা মতো সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাঠিয়েছে ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আমরাও অপেক্ষায় আছি। আমরা যেকোনো দিন তারিখ পেয়ে যেতে পারি। তারিখ নির্দিষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে।
১২টি ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হলেও ১০টিতে সরাসরি যাত্রী পরিবহন করা হবে জানিয়ে এমএএন ছিদ্দিক বলেন, বাকি দুটি যেকোনও সময়ে চলাচলের জন্য ডিপোতে প্রস্তুত থাকবে। ট্রেন দুটি পরিচালনার কর্মকর্তারাও প্রস্তুত থাকবেন। যাত্রীদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেদিকটি মাথা রেখে সব সময় ব্যাকআপ রাখতে হয়।
মেট্রোরেল চালুর জন্য শতভাগ প্রস্তুত আছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, সবশেষ কাজটি ছিল সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনের কাজ। এ কাজ করতে আমরা তিন মাস সময় লাগবে বলেছিলাম। কিন্তু কাজগুলো রাতে ও দিনে করে আমরা তা ইতিমধ্যে শেষ করেছি। এখন সিস্টেম ট্রায়াল বা সার্ভিস ট্রায়াল চলছে। আগামী কয়েক দিনের ভেতরে পুরোপুরি সার্ভিস ট্রায়াল শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।
জানা গেছে, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলমান। এরমধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন ২৮ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চালাচ্ছে। মিরপুর এলাকায় কিছু স্টেশনে সিঁড়ি ও চলন্ত সিঁড়ির (এস্কেলেটর) কিছু কাজ চলমান আছে। ট্রেনগুলো এখন যাত্রীবিহীন অবস্থায় পরীক্ষামূলক চলাচল করছে। জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পরামর্শকেরা ডিএমটিসিএলের নিয়োগ করা কর্মীদের সবকিছু বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
মেট্রোরেলের স্টেশনে লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যাবে। তিনতলা স্টেশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় টিকিট কাটার ব্যবস্থা, অফিস ও নানা সরঞ্জাম থাকবে, যাকে বলা হচ্ছে কনকোর্স হল। তিনতলায় থাকবে রেললাইন ও প্ল্যাটফর্ম। শুধু টিকিটধারী ব্যক্তিরাই ওই তলায় যেতে পারবেন। দুর্ঘটনা এড়াতে রেললাইনের পাশে বেড়া থাকবে। স্টেশনে ট্রেন থামার পর বেড়া ও ট্রেনের দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। আবার নির্দিষ্ট সময় পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবে।
মেট্রোরেলের প্রতিটি ট্রেনে ছয়টি কোচ রয়েছে। এর মধ্যে দুই প্রান্তের দুটি কোচকে বলা হচ্ছে ট্রেইলর কার। এতে চালক থাকবেন। এসব কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। মাঝখানের চারটি কোচ হচ্ছে মোটরকার। এতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের।
সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবেন ৩০৬ জন। প্রতিটি কোচ সাড়ে ৯ ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবেন। পুরোদমে চালুর পর মেট্রোরেল ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করবে বলে প্রকল্পে উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকার মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করেছে ২০ টাকা। আর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া হবে ১০০ টাকা। প্রথম পর্যায়ে মেট্রোরেল যে অংশে চলাচল শুরু করবে, সেই উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া হবে ৬০ টাকা।
উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার (মধ্য) ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ভাড়া একই- ২০ টাকা। এ ছাড়া প্রথম স্টেশন (উত্তরা উত্তর) থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।