স্বজনদের গুম-খুনের জন্য খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের কাছে সহায়তা দাবি করেছেন ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বর্বরতার শিকার পরিবারবর্গের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে বিচার প্রার্থনা সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করেছে সংগঠনটি। সংগঠনটির প্রত্যাশা, বিচার সংক্রান্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ভুক্তভোগীদের সব ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা করবেন।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহীনবাগ এলাকায় বর্তমান সরকারের আমলে গুমের শিকারের অভিযোগ তোলা সাজেদুল ইসলাম সুমনের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
খবর পেয়ে সেখানে জড়ো হন ওই এলাকায় বসবাসরত ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে নির্বিচারে ফাঁসি ও হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনরা। তারা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে তুলে ধরেন স্বজন হত্যার খতিয়ান।
এ সময় ‘মায়ের কান্না’ সংগঠনের ব্যানারে বিচার প্রার্থনা সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সংগঠনের সদস্যরা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে ৪৫ বছর আগের ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেন।
সংগঠনের এক নারী সদস্য বলেন, ‘আমাদের কষ্টের কথা বলার জন্য এখানে এসেছি। কারণ আমরা আমাদের বাবার লাশটা পাইনি। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার একটা প্রক্রিয়া ছিল। আমার বাবাকে খুন করে লাশটাও আমাদের দেয়নি। সেই কথাটা বলার জন্যই আমরা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে আসছি।’
আরেকজন বলেন, জাতি ও পৃথিবীবাসী জানুক সেদিন কি হয়েছিল। আজ ৪৫ বছরে এসব পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সহায়তায় পৃথিবীর মানুষ জানতে পারবেন বিচারের নামে নির্বিচার প্রহসনের কথা। পাবেন বিচার; এমনটাই আশা স্বজনদের।
কেউ হারিয়েছেন বাবা, কেউ ভাই আবার কেউ স্বামী কিংবা সন্তান। ১৯৭৭ সালের অক্টোবরে কথিত বিদ্রোহ দমনের নামে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান নির্বিচার ফাঁসি ও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের। গুম করা হয় অনেকের মরদেহ। এমনকি স্বজনের মৃত্যুর খবর পেতে, কবরের খোঁজ পেতে কেটে যায় ২০ বছর।
১৯৯৭ সালে পরিবারগুলো জানতে পারে স্বজনের শেষ পরিণতির অবস্থা। সেই থেকে বিচারের আশায় ঘুরছেন দুয়ারে দুয়ারে। বিচারের নামে জিয়ার হাতে খুনের শিকার প্রায় সবাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। তবে নির্লিপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি।