ইডেনের রাজধানী স্টকহোমের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে কোরআন পোড়ানো হয়। ছবি: এএফপি
সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কোরআন অবমাননার ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করেছে। খবর আল-জাজিরার।
আদালতের অনুমতির পর ঈদুল আজহার দিনে সুইডেনে পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ানো হয়। ইরাক থেকে আসা অভিবাসী সলমন মোমিকা মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে কোরআন পোড়ান। বুধবার (২৮ জুন) রাজধানী স্টকহোমের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সে সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
এ ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা নিন্দা জানিয়েছেন।
তুরস্ক
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন কোরআনের অবমাননা ঘৃণ্য একটি কাজ।
তিনি টুইট বার্তায় বলেন,
মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড কখনো গ্রহণযোগ্য না। এই ধরনের ধৃষ্টতা দেখেও চোখ ফিরিয়ে থাকা এই ঘটনাকে সমর্থন দেয়ার লক্ষণ।
মরক্কো
এ ঘটনার পর সুইডেন থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিয়েছে মরক্কো। এছাড়াও রাজ্যটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুইডেনের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্সকে রাবাতে ডেকে পাঠিয়েছেন এবং এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এতে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোরআন পোড়ানোর ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং একইসঙ্গে তুরস্ককে সুইডেনের ন্যাটোয় যোগদানের প্রচেষ্টাকে অনুমোদন দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন,
ধর্মীয় গ্রন্থ পুড়িয়ে ফেলা অসম্মানজনক ও আঘাতমূলক। এটি বৈধ হলেও যথাযথ না। আমরা অবিলম্বে হাঙ্গারি ও তুরস্ককে সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের অনুমোদন দেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
মিশর
মিশর বলেছে মোমিকার কাজটি লজ্জাজনক। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি’ বলে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এক বিবৃতিতে মিশরের পক্ষ থেকে বলা হয়,
পবিত্র কোরআন পোড়ানোর পুনরাবৃত্তির ঘটনা এবং সম্প্রতি কিছু ইউরোপীয় দেশে ইসলামোফোবিয়া এবং ধর্মের অবমাননার অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। যেসব ঘটনা ধর্মীয় বিশ্বাসকে প্রভাবিত করে আমরা সেসব নিন্দনীয় ঘটনা প্রত্যাখ্যান করছি।
ইরাক
ইরাক এ ঘটনাকে ‘জাতিবৈশিষ্ট্যবাদ ভিত্তিক’ এবং ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে অভিহিত করেছে। এছাড়াও তারা এটিকে ‘চরমপন্থী’ ও ‘বিকৃত’ মস্তিষ্কের মানুষের কাজ বলেও আখ্যায়িত করেছে।
ইরাকি সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘তারা শুধু ‘জাতিবৈশিষ্ট্যবাদ নয়, সহিংসতা ও ঘৃণার প্রচারও করে। এই দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা, মূল্যবোধ এবং অন্যদের বিশ্বাসের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষিক।
জর্ডান
‘জাতিবৈশিষ্ট্যবাদ’ ও ‘উসকানিমূলক’ বলে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে জর্ডান।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোরআন পোড়ানোর এই ঘটনা বিপজ্জনক। এছাড়াও এ ঘটনা ইসলাম ভীতি প্রকাশ করে ও সহিংসতাকে উসকে দেয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে জর্ডান কখনো এই ঘটনাকে সমর্থন করে না।
কুয়েত
কুয়েতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, কোরআন আগুনে পোড়ানো একটি বিপজ্জনক, উসকানিমূলক পদক্ষেপ; যা সারা বিশ্বের মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত করেছে।
এছাড়াও দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ‘ঘৃণা, চরমপন্থা এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার অনুভূতি’ পরিত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে।
ইয়েমেন
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে ইয়েমেন সরকার বলেছে, বিদ্বেষপূর্ণ চরমপন্থী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের অনুভূতিকে ইচ্ছাকৃতভাবে উসকে দেয়া হচ্ছে।
এই ঘটনা ঘৃণার সংস্কৃতি থেকে উদ্ভূত এবং এর পুনরাবৃত্তি বন্ধের আহ্বান জানায় দেশটি।