বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে সড়কেই সাঁতার কাটছে শিশুরা। রাজধানীর কাঁঠালবাগান থেকে
রাজধানীসহ সারা দেশে ঈদের আগের দিন থেকে এখন পর্যন্ত টানা ৪ দিন বৃষ্টি ঝরছে। রাজধানীতে বৃষ্টি উদ্যাপন ও ভোগান্তি পোহানো দুটোই চলছে সমান তালে।
বর্ষার বৃষ্টি একেবারে জেঁকে বসেছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনেকেই বের হচ্ছেন বাইরে। কেউবা ঘুরতে, কেউ আবার প্রয়োজনে।
তবে শনিবার (১ জুলাই) দুপুরের পর যারাই বাইরে বের হয়েছেন তাদের পড়তে হয়েছে বৃষ্টির কবলে। এদের মধ্যে কেউ ভিজে ভিজে বৃষ্টি উদ্যাপন করছেন, কেউ আবার ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
রাজধানীর শাহবাগ, বাংলামোটর, কাওরানবাজার, হাতিরঝিল, মিরপুর, ৩০০ ফিট ও উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় জমে গেছে পানি। শাহবাগে মেট্রোরেল ও রাস্তা সংস্কারের কাজ চলায় ওদিকের রাস্তা দিয়ে যারা যাতায়াত করছেন; তাদের ভোগান্তির শেষ নেই।
রাজধানীর হাতিরপুল কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা বলেন,
না দেখলে বিশ্বাস করবেন না, বৃষ্টির ফলে অলিগলিতে শুধু পানি না স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। দশ-পনের মিনিটের বৃষ্টিতে এত পানি জমেছে যে শিশুরা সাঁতার পর্যন্ত কাটতে পারছে।
যারা ভেবেছেন গাড়ি বা সিএনজি অটোরিকশায় চড়লে ভিজতে হবে না, তাদের দশা হয়েছে আরও করুণ। বৃষ্টির পানি ঢুকে স্থানে স্থানে গাড়ি ও অটোরিকশা বিকল হয়ে আছে। যাত্রী ও চালক উভয়কে সিএনজি বা গাড়ি ঠেলে পার করতে হচ্ছে।
বৃষ্টিতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হওয়া হামিদ বলেন,
ঈদের ছুটি আজ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ভাবলাম বাচ্চাদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যাই। একবার শাহবাগে এসে বৃষ্টির জমে থাকা পানিতে সিএনজি নষ্ট হলো, আবার মিরপুর ১০ নম্বর গিয়ে সিএনজি নষ্ট হলো। ঘুরবো কী ভাই! নষ্ট সিএনজি ধাক্কায়ে কুল পাচ্ছি না।
বৃষ্টির পানিতে বিকল হয়ে থাকা সিএনজি অটোরিকশাচালক বলেন,
জমে থাকা পানির মধ্যে সিএনজি চালালে প্রায়ই ইঞ্জিনে পানি ঢুকে যায়। ইঞ্জিনে পানি গেলে গাড়ি হয়ে যায় বিকল। একা আবার এ গাড়ি পানি থেকে ঠেলে আনা যায় না। তখন বাধ্য হয়ে যাত্রী-ড্রাইভার সবাইকে হাত লাগাতে হচ্ছে।
আটকে থাকা রিকশা ধাক্কা দিয়ে পানি থেকে বের করছেন দুই
মোটরসাইকেল চালকরা বলছেন, বৃষ্টির মধ্যে বাইক চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে রাস্তায় পিছলে যাওয়ার ভয় ও পানিতে ডুবে থাকা খানা-খনদ্দের ভয়ে অনেকেই বাইরে বের হচ্ছে না।
এদিকে পানি জমে থাকায় হাতিরঝিল, মিরপুর ও ৩০০ ফিটের অনেক জায়গা এড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীদের। এসব রাস্তায় গেলে হাঁটু পানিতে বিকল গাড়ি ধাক্কা দিয়ে বাসায় ফিরতে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট পথচারী ও গাড়ি চালকরা।
বড় রকমের ঝামেলায় পড়ছেন যারা গ্রাম থেকে ছুটি কাটিয়ে রাজধানীতে ফিরছেন তারা। ব্যাগ-বোচকা, মালামাল নিয়ে বৃষ্টিতে নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে এক রকমের হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
দিনাজপুর থেকে পরিবারসহ গাবতলি বাসস্ট্যান্ড আসা যাত্রী হোসেন বলেন,
রাজধানীতে ঢুকেই বৃষ্টির কবলে পড়তে হলো। একে তো গাড়ি নেই, অন্যদিকে যা পাওয়া যাচ্ছে বাসা মিরপুর শুনে তারাও ওদিকে যেতে চাচ্ছে না।
বৃষ্টিতে যাদের বাসা একতালা ও কিছুটা নিচু তাদের ভোগান্তি ছাড়িয়েছে সব সীমা। বাড্ডা পোস্টঅফিস রোডের বাসিন্দা বাচ্চু বলেন,
টানা বৃষ্টিতে বাসার মেঝেতে পর্যন্ত পানি জমে গেছে। বউ-বাচ্চা নিয়ে কাজ ফেলে খাটের ওপর বসে থাকতে হচ্ছে।
এদিকে আবার একেবারে ভিন্নচিত্র টিএসসি ও ফুলার রোডসহ বেশ কয়েকটি এলাকায়। বন্ধুরা মিলে বৃষ্টিতে ভিজে চা খাচ্ছেন।
টিএসসিতে ভিজতে ভিজতে চা খাচ্ছিলেন কামরুল। তিনি বলেন,
বৃষ্টির মধ্যে চা খাওয়ার আলাদা একটা নিয়ম আছে। কড়া লিকারের চা নিবেন আর বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে খাবেন। এতে করে বৃষ্টির পানিতে চায়ের লিকার হালকা হতে শুরু করবে। এতে একেক চুমুকে একেক রকমের স্বাদ পাওয়া যায়।
বৃষ্টির মধ্যে ভিড় জমেছে চায়ের দোকানে।
অনেকেই আবার মত্ত বৃষ্টিবিলাসে। অনেকে ব্যস্ত ছবি তুলতে, অনেকে আবার গলা ছেড়ে গান পর্যন্ত গাইছেন।
বৃষ্টিবিলাসে মত্ত এক যুবক। বাংলামোটর
জল জমে থাকা বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির মধ্যে পথশিশুরা মেতে উঠেছেন জলকেলিতে।
বৃষ্টির মধ্যে জলকেলি উদযাপনে শিশুরা।
তবে রাজধানীবাসীর মনে প্রশ্ন কয়দিন চলবে এমন বৃষ্টি। এ ব্যাপারে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বর্ষার মৌসুমি বৃষ্টিপাত টানা ৭ দিন থেকে ১০ দিন পর্যন্ত চলতে পারে।
শনিবার (১ জুলাই) আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।