মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন। ৫৩ বছর বয়সী হান্টার পেশায় আইনজীবী। তবে পেশায় আইনজীবী হলেও নিজের অপরাধ সংখ্যা নেহায়েতই কম নয়।
সম্প্রতি দুটি আয়কর সংক্রান্ত অপরাধ ও মাদকসেবী থাকাকালীন অবৈধভাবে বন্দুক রাখায় দোষ স্বীকারে সম্মত হয়েছেন তিনি। গত ২০ জুন যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালতে কৌঁসুলিরা এক নথিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
হান্টার বাইডেনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সর্বশেষ যে তথ্য পাওয়া যায় তা গত ২২ জুনের। তথ্যটি প্রকাশ করেছে মার্কিন কংগ্রেসনাল কমিটি। প্রেসিডেন্টের পরিবারের সদস্যদের ওপর তদন্তের অংশ হিসেবে এই তদন্তে হান্টারের হোয়াটসঅ্যাপের ম্যাসেজ থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালে হান্টার বাইডেন চীনে তার ব্যবসায়িক সহেযোগীকে তিরস্কার করেছেন এবং তাকে বাবা জো বাইডেনের ক্ষমতার হুমকিও দেন। যদিও সে সময় বাইডেন প্রেসিডেন্ট ছিলেন না, তিনি তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পরে এ বিষয়ে জো বাইডেনকে সাংবদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সে সময় তিনি তার ছেলের সঙ্গে ছিলেন না। এমনকি তিনি হান্টারের ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত নন।
২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর রিপাবলিকানরা চেম্বারের তদারকি ও জবাবদিহি কমিটির কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাইডেনের পরিবার ও ব্যবসায়িক লেনদেনের তদন্ত করা শুরু করে। তদন্তে হান্টার বাইডেন ও প্রেসিডেন্টের ৭৪ বছর বয়সী ভাইয়ের ইউক্রেন চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কগুলো উঠে আসে।
২০০৯ সালে জো বাইডেন যখন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অধীনে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন সে সময় চীনের সঙ্গে পার্টনারশিপে ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক বিনিয়োগ তহবিল রোজমন্ট সেনেকা পার্টনার্স শুরু করেন হান্টার বাইডেন। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ২৫ লাখ ডলারের লেনদেন সংক্রান্ত ৯৩টি টেলিগ্রাম পেয়েছিল তদন্ত কমিটি। যেগুলো বাইডেনের পরিবার এবং চীনভিত্তিক বিনিয়োগ তহবিলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই তহবিলটি নিয়ন্ত্রণ করতো চীনের একটি ব্যাংক।
যাই হোক, হান্টারে কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তথ্য ফাঁসকারী এবং সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বিরোধীদল রিপাবলিকান পার্টির আইনপ্রণেতারা অভিযোগ করেছেন, তাদের তদন্তে বাইডেন প্রশাসন বাঁধা দিয়েছে। তারা আরও বলেছেন, বাইডেন চীন নিয়ে যে নীতি পোষণ করেন তা তার ছেলের ব্যবসায়িক লেনদেনের সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
শুধু যে চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে তাই নয়। হান্টার বাইডেনের ইউক্রেনের সঙ্গেও রয়েছে ব্যবসায়িক সম্পর্ক। সেখানেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে পাঁচ বছর হান্টার ইউক্রেনের একটি প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি বুরিসমা হোল্ডিংস লিমিটেডের পরিচালনা পরিষদে কাজ করেছেন। সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন, জ্বালনি শিল্প বিষয়ে শূন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে কীভাবে হান্টার একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদে ঢুকতে পারেন।
সম্প্রতি একাধিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিএনপি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনকে লবিস্ট হিসেবে নিযুক্ত করেছে। মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ধর্মনিরপেক্ষ সরকারকে উৎখাত করে সেই জায়গায় বিএনপিকে আনতে বাইডেন প্রশাসনের ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাকে। পুরো ব্যাপারটি পরিচালনায় রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
প্রতিবেদন মতে, ব্লু স্টার স্ট্রাটেজিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী লবি ফার্ম। এই লবিস্ট ফার্মকে বিএনপি এবার ভাড়া করেছে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য।
২০২১ সালের একটি স্মৃতিকথায় হান্টার কোকেন ব্যবহার এবং মদ্যপানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। যদিও তিনি বলেছেন, বর্তমানে তিনি চিকিৎসার মাধ্যমে আসক্তি থেকে মুক্তি পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি তার চার সন্তানের মায়ের কাছে থেকে শিশু সহায়তা মামলার নিষ্পত্তি পান এবং ২০ জুন আদালতের প্রসিকিউটররা জানান, তিনি দুটি আয়কর সংক্রান্ত অপরাধ ও মাদকসেবী থাকাকালীন অবৈধভাবে বন্দুক রাখায় দোষ স্বীকারে সম্মত হয়েছেন।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের প্রশ্ন- ছেলে হান্টার বাইডেনের কেলেঙ্কারি কি তার বাবা জো বাইডেনের আসন্ন নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে? যদিও তার প্রতিপক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্পও আইনি জটিলাতা নিয়ে সম্প্রতি সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন।