যখন পতনশীল অর্থনীতি চীনের জন্য প্রধান সমস্যাগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে ঠিক তখনি নতুন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে চীন। চরম আবহাওয়া দেশটিকে খাদ্য নিরাপত্তা সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
বুধবার (৫ জুলাই) ‘ইনসাইডওভার’ প্রকাশনায় কলামিস্ট ফেডেরিকো গিউলিয়ানি এ কথা বলেছেন।
চীনের আবহাওয়া প্রশাসন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, মারাত্মক এল নিনোর প্রভাবে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশটির দক্ষিণ অঞ্চলে বন্যা ও উত্তরে খরার আশঙ্কা রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রার চেয়ে মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর বেশি উষ্ণ হয়ে আছে। সবশেষ ২০১৮-১৯ সালে এ ধরনের এল নিনো পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল। গড়ে ২ থেকে ৭ বছর পর পর এল নিনো পরিস্থিতি হয়।
স্প্যানিশ শব্দ ‘এল নিনো’র অর্থ হলো ‘লিটল বয়’ বা ‘ছোট ছেলে’। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ থাকে, তখন তাকে এল নিনো বলা হয়। আর এর বিপরীত অবস্থার নাম ‘লা নিনা’, যার অর্থ ‘লিটল গার্ল’ বা ‘ছোট মেয়ে’। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে, তখন তাকে লা নিনা বলা হয়।
এনওএএর জলবায়ুবিজ্ঞানী মিশেল এল হুরু বলেন, এল নিনো কতটা শক্তিশালী, তার ভিত্তিতে পরিবেশের ওপর বিভিন্ন ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। যেমন বিশ্বজুড়ে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টি কিংবা খরার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ইনসাইডওভার অনুসারে, সাম্প্রতিক এক গবেষণায়, পিয়ার-রিভিউ করা একাডেমিক জার্নাল নেচার ফুড বলেছে যে চীনের চরম আবহাওয়ার কারণে গত দুই দশকে চীনে মোট ধানের ফলনের এক-দ্বাদশ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
সম্প্রতি, ইউএস ন্যাশনাল ওশেনিক ও অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ঘোষণা করেছে যে, এল নিনোর প্রভাব ৮ থেকে ১০ মাস পর্যন্ত থাকতে পারে ও উত্তর গোলার্ধের শীতকালে ধীরে ধীরে শক্তিশালী হতে পারে যা আগামী বছর পর্যন্ত প্রসারিত হবে।
এমনকি, মে মাসের শেষ সপ্তাহে, চীনের জরুরী ব্যবস্থাপনা বিভাগ সতর্ক করেছিল যে, দেশটির উত্তর-পূর্ব ও উত্তর অংশে দেশের শীর্ষ ফসল উৎপাদনকারী প্রদেশগুলিতে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা এবং শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এদিকে, চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ইউনান ক্রমাগত খরার সম্মুখীন হচ্ছে।
গ্লোবাল টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, সম্প্রতি, চীনের ন্যাশনাল ক্লাইমেট সেন্টার (এনসিসি) রোববার (২ জুলাই) ঘোষণা করেছে, দেশটি গত ছয় দশকের মধ্যে চলতি বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক গরমের দিন রেকর্ড করেছে ও দেশের উত্তরাঞ্চলীয় শহরগুলিতে একাধিক তাপপ্রবাহের ঘটনা অত্যন্ত বিরল।
গ্লোবার টাইমসের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, চীন এই বছর গড়ে ৪ দশমিক ১ দিন রেকর্ড করেছে যেখানে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। ১৯৬১ সালে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ এটিই সর্বোচ্চ।
২০২৩ সালে জাতীয় দুর্যোগ হ্রাস কমিটির কার্যালয় এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জলসম্পদ, কৃষি ও গ্রামীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং চীন আবহাওয়া প্রশাসন এবং রাজ্য বনায়ন এবং তৃণভূমি প্রশাসনের তৈরি একটি প্রতিবেদন মতে, এল নিনোর কারণে এবার চীনকে খাদ্য নিরাপত্তার হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।