ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশেগুলো বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাবে কিনা সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়েছে। দলটি নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে আজ শনিবার (৮ জুলাই) ১৫ দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছানো কথা রয়েছে। ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলটির মতামতের ভিত্তিতে পর্যবেক্ষক পাঠাবে ইইউ। প্রতিনিধি দলটি সব দলের অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন আয়োজনে ও জাতীয় নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন।
ইইউর প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলটি ২৩ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবে। পর্যবেক্ষক দলটি আগামী জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার পাশাপাশি নির্বাচনের সময় পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সহিংসতামুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ও নির্বাচন করার পরিবেশের মতো বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে।
এ দলটি বাংলাদেশের সরকারের প্রতিনিধি, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ২৭ দেশের জোট ইইউ পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত নেবে এ প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমে বলেন, ইইউর প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলটির প্রতিবেদন আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ পর্যবেক্ষক দল ব্রাসেলসে গিয়ে যা প্রতিবেদন দেবে, তার ওপর নির্ভর করে ইইউ’র পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা দপ্তরের হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ও ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেপ বরেল সিদ্ধান্ত নেবেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কিনা।
এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে বিতর্কিত হওয়ায় সরকারের ওপর আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার বিষয়ে চাপ রয়েছে। এখন এ পর্যবেক্ষক দল যদি গিয়ে বলে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না, তাহলে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না সংস্থাটি। এতে বিতর্ক আরও তুঙ্গে উঠবে এবং ক্ষমতাসীনদের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যুক্তি গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। এটি ভবিষ্যতে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে। ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরির চাপ রয়েছে সরকারের ওপর।
ঢাকায় ইইউর রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি গণমাধ্যমে বলেছেন, প্রাক-নির্বাচনী পর্যেবক্ষক দল নির্বাচনের প্রস্তুতি দেখবে। সেই সঙ্গে ইইউর পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসতে পারবেন কিনা, সেটি খতিয়ে দেখবে। এ জন্য অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণ এবং সরকারের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পেতে হবে যে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আসতে পারবেন।
ইতোমধ্যে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে এ দলটির কার্যক্রম এবং দলগুলোর নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে বৈঠক করেছে ইইউ’র ঢাকা দূতাবাস। আর ঢাকায় ১২টি পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও প্রতিনিধিদের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সফর নিয়ে ব্রিফ করেছেন ইইউর রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। এ বিষয়ে নিজ বাসায় গত ৫ জুলাই চা-চক্রের আয়োজন করেন তিনি।
২০১৪ সালের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় সংস্থাটির নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা আসেননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে চিঠিতে ইইউকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন আগে। তবে কোনো পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠায়নি ইইউ। কেন পাঠায়নি, তার কারণও জানায়নি।