এ যেন মশাদের নিরাপদ বাসস্থান। ছবি:সংগৃহীত
অনেকটা হাঁকডাক দিয়ে এডিশ মশা নিধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন একশো দিনের ক্রাশ প্রোগ্রামে নামলেও ঝিমিয়ে গেছে কার্যক্রম। ফলে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এদিকে ৪৯০টি হটস্পটের পাশাপাশি চিহ্নিত করা হয়েছে ডেঙ্গুর ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ১১৬ জন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে একশো দিনের ক্রাশ প্রোগ্রামের ঘোষণা দিয়ে জোরেশোরে মাঠে নেমেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র। হাঁকডাক দিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে শুরু করে মশা নিধন কার্যক্রম। কিন্তু কয়েকদিন না যেতেই ঝিমিয়ে যায় কার্যক্রম। ছিটানো ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও আছে নানা অভিযোগ।
কিন্তু মশার বংশবিস্তারের জন্য খাল, নালা, ডোবা ও বাসাবাড়িকে দায়ী করা হলেও এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে নেই তেমন কোনো পদক্ষেপ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চকবাজারের একটি খালে ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে জমে আছে পানি। ডাবের খোসা ও শোলা যেন মশার প্রজননক্ষেত্র। ডাস্টবিনের আশপাশে সড়ক যেন মশার বংশবিস্তারের আঁতুড়ঘর। নানা সমস্যার কথা জানান এলাকাবাসী।
চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের জরিপ বলছে, মশার প্রজনন ও আক্রান্তের হার বিবেচনায় নগীর ৪১টি ওয়ার্ডে ৪৯০টি হটস্পট রয়েছে।
আর আইইডিসিআর এর প্রতিনিধি দল ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের জন্য হালিশহর ও আগ্রাবাদসহ ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচটি স্থান চিহ্নিত করেছে। এদিকে চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ১১৬ জন। চলতি বছর ১২ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি আক্রান্ত ৮ শতাধিক। সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রমকে দুষলেন চিকিৎসকরা।
চমেকের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শাকীল ওয়ায়েজ বলেন, ‘এবার মশকনিধন কর্মসূচি কম হচ্ছে। আরও বাড়ানো উচিত।’
চমেকের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. ওমর ফারুক জানান, এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ।
এদিকে ঢাকার মতো ড্রোন উড়িয়ে আগামী রোববার থেকে বাসাবাড়ির ছাদে মশার উৎস খোঁজার ঘোষণা দিয়েছে সিটি করপোরেশন।
ডেঙ্গু ৪৯০টি হটস্পট:
১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ২৫টি, ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডে ১৫টি, ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডে ১৫টি, ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডে ৫২টি, ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডে ২৯টি, ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডে ১৭টি, ৮ নম্বর শোলকবহর ওয়ার্ডে ৩০টি, ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ১৩টি, ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে ৬টি, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে ১৬টি, ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডে ১২টি, ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ৩টি, ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে ৭টি, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ডে ৫টি, ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডে ৯টি, ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে ৭টি, ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে ১৩টি, ২০ নম্বর দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডে ১২টি, ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডে ১৪টি, ২২ নম্বর এনায়েত বাজার ওয়ার্ডে ৭টি, ২৩ নম্বর উত্তর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে ৮টি, ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে ২টি, ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডে ১২টি, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে ১০টি, ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে ১২টি, ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে ১৬টি, ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে ৮টি, ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে ৩টি, ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে ৫টি, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডে ৫টি, ৩৫ নম্বর বঙিরহাট ওয়ার্ডে ৫টি, ৩৭ নম্বর মুনিরনগর ওয়ার্ডে ৫টি, ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে ১টি, ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডে ১৪টি, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে ১৬টি এবং ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডে ৪টি মশার প্রজননস্থল রয়েছে।
তবে ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ড, ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড, ৩৪ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড এবং ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙা ওয়ার্ডে কোনো ব্রিডিং পয়েন্ট নেই বলে জরিপের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
আইইডিসিআর এর প্রতিনিধি দলের পাঁচ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে হালিশহর, আগ্রাবাদ, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকা, ডবলমুরিং এবং বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকা।