যশোরে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের পাঁচজন নিহতের ঘটনায় গ্রামজুড়ে চলছে মাতম। প্রিয়জনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ স্বজনরা। বেপরোয়া গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটায় চালকের শাস্তি দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার যাদবপুর গ্রামের হেলাল মুন্সির মেয়ে খাদিজার চিকিৎসার জন্য শুক্রবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হন তার স্ত্রী, তিন সন্তান–খাদিজা, হাসান ও হোসেন, শাশুড়ি মাহিমা, খালাশাশুড়ি রাহিমা ও তার মেয়ে জেবা। ইজিবাইকে যশোরে যাওয়ার পথে যশোর-মাগুরা মহাসড়কের লেবুতলা এলাকায় পৌঁছলে বিপরীতমুখী রয়েল পরিবহনের একটি বাস বেপরোয়া গতিতে যাওয়ার সময় ইজিবাইকটিকে সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় ইজিবাইকটি। এ সময় বাসটি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মোটরসাইকেল চালককেও ধাক্কা দেয়। এতে যমজ দুই শিশুসহ সাতজন মারা যান। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন হাসান-হোসেনের মা সোনিয়া ও বোন খাদিজা।
যশোর হাসপাতাল থেকে গভীর রাতে একই পরিবারের পাঁচজনের মরদেহ আনা হয় যাদবপুরের গ্রামের বাড়িতে। সকাল থেকে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসীর ঢল নামে নিহতদের বাড়িতে। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় শোকের আবহ বিরাজ করছে পুরো এলাকায়।
নিহত হাসান ও হোসেনের বাবা হেলাল মুন্সি বলেন, ‘মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে দুই ছেলেকে হারাতে হবে কে জানত। আমার মানিকরা বেপরোয়া গতির গাড়ির চালকদের কারণে মারা গেল। এ বিচার আমি কার কাছে দেব। আমার স্ত্রী ও কন্যা বাঁচবে কি না, তা-ও জানি না। আমার সব শেষ হয়ে গেছে।’
নিহত মাহিমার স্বামী বাবুল মুন্সী বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আমার স্ত্রী মাহিমা ও দুই নাতি হাসান-হোসেন মারা গেছে। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। কিছুই নেই। এ শোক আমি কোথায় রাখব। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। বাসচালকের ফাঁসি চাই।’
এদিকে বেপরোয়া গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটায় চালককে আটক ও তার শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা জানান, সড়ক ডিভাইডার থাকার পরও চালক গতি কমায়নি। এতে সাতটি তাজা প্রাণ ঝরে গেছে। দেশে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। দোষী চালকদের বিচার হয় না। এ ঘটনার বিচার চাই। আসামিদের দ্রুত আটক করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান তারা।
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, ‘পুরো ইউনিয়নবাসী শোকাহত। প্রত্যেকের চোখে পানি। এমন দুর্ঘটনার সাক্ষী এর আগে আমরা হইনি। এ ক্ষতি অপূরণীয়। আমরা ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। দোষী চালকদের বিচার না হলে সড়ক কখনোই নিরাপদ হবে না।’
এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যাদবপুর স্কুল মাঠে নিহতদের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।
দুর্ঘটনায় নিহত হাসান-হোসেনের নানা ছোটন মুন্সি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা বাসচালক ও তার সহকারীর বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। তবে এ ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।