রাজধানীর এক বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনছেন এক ক্রেতা।
বছরজুড়ে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামের চাপে ভোক্তারা নাজেহাল। বাজারে অভিযান চালিয়ে এর লাগাম টানা সম্ভব নয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, মূল্যস্ফীতি কমাতে দরকার বাজারবান্ধব মুদ্রানীতি, যেখানে রয়েছে ব্যাপক ঘাটতি।
কখনও আলু, কখনও আদা-রসুন-পেঁয়াজ, কখনও আটা-ময়দা, ডাল-চিনি-তেল-গুঁড়োদুধ, কখনও নানা পদের মসলা, কখনও টুথপেস্ট-সাবান-ডিটারজেন্ট, আবার কখনও বা ডিম-মুরগি – বছরজুড়েই এগুলোর দামের চাপে রেখেছে ভোক্তাদের।
প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা নিত্যপণ্যের বাড়তি দামে চাপেপড়া এক ক্রেতা বলেন, প্রায় প্রতিদিনই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। আর যে পণ্যের দাম বাড়ে, তা আর কমে না।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামের কথা স্বীকার করে এক বিক্রেতা বলেন, যে জিরার কেজি গত মাসে ৮০০ টাকা করে বিক্রি করেছি, সেটি চলতি মাসে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনভাবে আজ এ পণ্যের দাম বাড়তি, তো কাল ওই পণ্যের দাম বাড়তি।
এদিকে, সম্প্রতি বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে কাঁচা মরিচ। একপর্যায়ে মসলাজাতীয় এ পণ্যটির কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। মরিচের দাম এতটা বেড়ে যাওয়ায় অবাক খোদ বিক্রেতা! এক কাঁচা মরিচ বিক্রেতা বলেন, তিনি ৫/৭ বছর ধরে মরিচ বিক্রি করেন; কিন্তু এত বেশি দাম কখনও দেখেননি।
বছরজুড়ে ভোক্তাদের স্বস্তি দেয়ার নামে ভোক্তা অধিকার ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অভিযান চলে। এতে সহনীয় দামে বাজার নেমে না এলেও প্রায়ই জরিমানার মুখে পড়েন খুচরা বিক্রেতারা। দিন শেষে তেমন একটা সুবিধা পান না ভোক্তারা।
তাহলে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কী করা দরকার? এমন প্রশ্নে অর্থনীতিবিদের উত্তর: বাংলাদেশ ব্যাংকের কৌশলী মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে হবে।
অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বাজার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার বিষয়টি বাংলাদেশের একটি দীর্ঘ দিনের সমস্যা, যা ভোক্তাদের জন্য ভালো নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি বেশি ঋণ নেয়ার একটা প্রবণতা আছে সরকারের। আমরা জানি যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যদি সরকার বেশি পরিমাণে ঋণ নেয়, তাহলে সেটি মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দিতে পারে।’
অন্যদিকে, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশও (ক্যাব) বলছে, অভিযান চালিয়ে হয়তো তাৎক্ষণিক সুবিধা মেলে; কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ভোক্তাবান্ধব বাজার নিশ্চিতে আমদানি-রফতানি, ব্যাংক ঋণ আর ব্যবসা-বিনিয়োগের নীতি-কৌশল সাজানোর সময়ই মূল্যস্ফীতির আস্ফালনকে মাথায় রাখতে হবে।
ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, যদি বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে মুদ্রানীতি পরিচালনা করতে না পারে, তাহলে তার একটা বিরূপ প্রভাব অর্থনীতিতে আসবেই। ওটাই স্বাভাবিক।
এখন সুদের হার বাড়ানো ছাড়া কোনো ব্যবস্থা আছে বলে মনে করেন না তিনি।
প্রসঙ্গত, ভোক্তার ব্যয় বাড়িয়ে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯.০২ শতাংশে, যা গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। এক বছর আগে এ হার ছিল ৬.১৫ শতাংশ। এর আগে টানা ৬ বছর থেকেছে ৬ শতাংশের নিচে।