এআই-এর প্রতীকী ছবি
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বদলে দিচ্ছে গোটা বিশ্বের চিত্র। পাল্টে দিচ্ছে অর্থনীতির সমীকরণ। এবার এআই চীনের অর্থনীতিকে নতুন সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চীনের শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি উপমন্ত্রী জু জিয়াওলান।
শনিবার (৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়া।
এতে বলা হয়, চীন চলতি বছর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে বিগত সব বছরকে ছাপিয়ে গেছে; যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির অর্থনীতিকে নতুনভাবে সাজাচ্ছে। এর স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় সাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্মেলন-২০২৩’-এ, যেখানে হিউম্যানয়েড রোবটসহ ৩০টিরও বেশি অত্যাধুনিক পণ্য বিশ্বব্যাপী আত্মপ্রকাশ করছে।
শিল্প অভ্যন্তরীণ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের এআই বিপ্লব ডিজিটাল অর্থনীতি ও শিল্প বিপ্লবকে একটি নতুন ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাবে। এআই প্রযুক্তিগুলো বিস্তৃত শিল্পে রূপান্তরিত হচ্ছে ও চীনের পাশাপাশি বিশ্বের অর্থনীতিতে আরও প্রবৃদ্ধি বাড়াচ্ছে।
এদিকে গত বছরের শেষদিকে চ্যাটজিপিটি বিশ্বব্যাপী ঝড় তোলার পর থেকে, চাইনিজ টেক জায়ান্ট এবং স্টার্টআপগুলো একের পর এক একই ধরনের এআই চ্যাটবট চালু করে এআই প্রতিযোগিতায় যুক্ত হচ্ছে।
চীনের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি উপমন্ত্রী জু জিয়াওলান বলেন, ‘চীনের এআই শিল্প বিকাশের ধারার মধ্যে রয়েছে। মূল শিল্পের পরিমাণ ৫০০ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) এবং এআই এন্টারপ্রাইজের সংখ্যা ৪ হাজার ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। পাশাপাশি চীন এআই সম্পর্কিত অবকাঠামো নির্মাণ বাড়িয়েছে।’
টেসলার সিইও ইলন মাস্ক বলেন, ‘ভবিষ্যতে চীন শক্তিশালী এআই দক্ষতা অর্জন করবে।’ আর চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের অধীনে হংকং ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের লিউ হংবিন বলেন, ‘এআই-সম্পর্কিত ক্ষেত্রগুলোতে কর্মরত লোকের সংখ্যা, বিপুল পরিমাণ এআই ডেটার সুবিধা, উন্নত এআই অবকাঠামো এবং সরকারের সহায়ক নীতির পরিপ্রেক্ষিতে চীন ২০৩০ সালের মধ্যে এআইতে বিশ্বকে শাসন করবে।’
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, শিল্প এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য বিপুল সংখ্যক অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে চীন, যা দেশটির ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশকে পরিচালিত করতে সাহায্য করছে এবং অর্থনৈতিক ল্যান্ডস্কেপকে নতুন আকার দিচ্ছে।
ইতোমধ্যে চীনে ২ হাজার ৫০০টিরও বেশি ডিজিটাল এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর ওয়ার্কশপ ও কারখানা তৈরি করা হয়েছে, যা গবেষণা ও উন্নয়নের ধারাকে ২০ দশমিক ৭ শতাংশ সহজ ও উৎপাদন দক্ষতা ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ উন্নত করতে সাহায্য করেছে।
এদিকে গত সাত বছরে চীনের ডিজিটাল অর্থনীতির আকার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গ্লোবাল ডিজিটাল ইকোনমি কনফারেন্স-২০২৩ এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-২০২২ পর্যন্ত চীনের ডিজিটাল অর্থনীতির আকার ৪ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনের ডিজিটাল অর্থনীতির আকার ২০২২ সালে ৫০ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে পৌঁছেছে, যা দেশটির জিডিপির ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ।
চায়না ইনস্টিটিউট অব কনটেম্পোরারি ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসের অধীনে সাইবারস্পেস গভর্নেন্স রিসার্চ সেন্টারের প্রধান ট্যাং ল্যান বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং শিল্প বিপ্লবের একটি নতুন ধারা চালনা করছে চীন। বেইজিংয়ের ডিজিটাল অর্থনীতির এই বিকাশ একটি বিশাল বাজার তৈরি করবে, যেটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সম্ভাবনাময় ব্যবসার সুযোগ তৈরি করবে। এর মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে।