দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র।
সারা দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশজুড়ে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ঢাকামুখী রোগীর চাপও। রোববার (৯ জুলাই) রাজধানীর বেশ কিছু হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাধারণ ডেঙ্গু রোগীর ৮০ থেকে ৯০ ভাগের চিকিৎসা ঘরেই সম্ভব।
অনেকে জটিলতা নিয়ে এলেও অনেকেই আবার আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ছুটে আসছেন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে। এভাবে ঢাকায় রোগী আসার প্রবণতা চলতে থাকলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় সংকট বাড়বে।
তবে সংকট মোকাবিলায় ঢাকাসহ সারা দেশের হাসপাতালগুলো মানসম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ। সম্প্রতি ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন তারা।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি এলাকার বাসিন্দা ৪৮ বছর বয়সী মরিয়ম বেগমের জ্বর আসে ঈদের পরপর। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়লে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন তিনি। ক্রমেই অবস্থার অবনতি ঘটায় চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন ঢাকায় যাওয়ার। বর্তমানে তিনি ভর্তি আছেন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আবার লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকে একই হাসপাতালে ভর্তি আছেন ফেরদৌসী বেগম নামে আরেক নারী। তবে মরিয়মের থেকে তার জটিলতা ছিল অনেক বেশি। ডেঙ্গুর প্রভাবে পেটে পানি জমে যায় তার। স্থানীয় চিকিৎসকরা তাকেও পাঠিয়ে দেন ঢাকায়।
শুধু সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালই নয়, রাজধানীর অন্যান্য সরকারি হাসপাতালেও চাপ বাড়তে শুরু করেছে ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগীর। কেউ কেউ জটিলতা নিয়ে এলেও অনেকে আবার আসছেন আতঙ্কিত হয়ে।
এদিকে দেশের সার্বিক ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপের দিকে যাচ্ছে। সারা দেশে চলতি বছর আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১২ হাজার। মৃত্যুর সংখ্যাও উদ্বেগজনক। এ অবস্থায় ঢাকাসহ সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে একই রকম মানসম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দিয়েছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ।
ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, সাধারণ ডেঙ্গু রোগীর ৮০ থেকে ৯০ ভাগের চিকিৎসা ঘরেই সম্ভব। অল্প অল্প করে তরল খাবার খেতে হবে। প্যারাসিটামলের বাইরে অন্য কোনো মেডিসিন খাওয়া যাবে না। ব্যথানাশক কোনো ওষধ খাওয়া যাবে না। শুধু প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে জ্বর হলে।
বৃষ্টির কারণে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে এডিসের বিস্তার আরও বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, জ্বর হলে অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। দ্রুত চিকিৎসা নিন। যেহেতু রোগী বেড়ে যাচ্ছে, তাই সবখানে ব্যবস্থাপনাটা হওয়া উচিত আধুনিক ব্যবস্থাপনায়। ডাক্তার এবং নার্সদের সরকারি এবং বেসরকারি এবং প্রাইভেট হাসপাতালের সবাইকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সব জায়গাতে একধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।