বরগুনার বামনা উপজেলায় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বরাদ্দ দেওয়া গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষনের(টিআর) ৯০ লাখ টাকা ও গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা/কাবিটা) প্রকল্পের ৩০০ মে.টন চাল বিভিন্ন ভৌতিক প্রকল্প তৈরী করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আত্মসাত করার অভিযোগ তোলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ৪ জুলাই বামনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করার পরে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে বরগুনা জেলা প্রশাসক আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বামনার ইউএনও ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
আজ বুধবার (১২ জুলাই) পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওই সকল প্রকল্প কমিটির কাছ থেকে ছাড় করা ১ কোটি ২লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায় করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা এবং তার যৌথ ব্যাংক হিসাবে জমা দেন।

জানা গেছে,বামনা উপজেলার জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রনালয় থেকে ২১টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুকুলে ৪০টি প্রকল্পের অনুকুলে টিআর এর ৯০ লাখ টাকা ও তিনটি কাবিখা প্রকল্পের অনুকুলে ৩০০ মে.টন চাল বরাদ্ধ দেওয়া হয়। পরে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ত্রান শাখা থেকে ১৪জুন বামনা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুকুলে উপ-বরাদ্ধ দেওয়া হয়।
টাকা ও চাল আত্মসাতের চেষ্টার ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় কর্তৃক বরাদ্দ পাওয়া গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা/কাবিটা) প্রকল্পের ৩০০ মে.টন চাল বিভিন্ন ভৌতিক নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাস্তবে এসকল প্রকল্পের কোন অস্থিত্ব নেই।ওই প্রকল্পগুলো হলো রতনশীলের বাসা থেকে আজিজ ডা.বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার দুপাশ মাটি দ্বারা ভরাট, এলজিইডির রাস্তা থেকে শুরু করে হিন্দুপাড়া হয়ে দফাদার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা সংস্কার ও খলিল মুন্সী বাড়ি থেকে রিয়াজ মুন্সী বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা নির্মাণ। এই প্রকল্পগুলোর কোন অস্তিত্ব নেই।

আত্মসাতের বিষয়টি জানাজানি হলে টাকা ও চাল ফেরত দেওয়ার জন্য বরগুনা জেলা প্রশাসকের নির্দেশ দেওয়ার পরে অবিক্রিত ১৫০ মে.টন চাল খাদ্য গুদামে ফেরত পাঠানো হয়। আর আত্মসাতকৃত ১৫০ মেঃটন চালের ৭২ লাখ টাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যৌথ ব্যাংক হিসাবে জমাদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে ওই টাকা থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাবিখার চাল বিক্রি বাবদ ৪৫ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বামনা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামের ঢাকাস্থ মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শাখায় জমা রাখা হয়েছিলো ৩০ লাখ। মন্ত্রনালয়ের এক কর্মকর্তাকে ঘুষ বাবদ তার ভাইয়ের ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়েছিলো ১০ লাখ টাকা বাকি ৫লাখ টাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতা হাতে রেখে ছিলো।পরে ওই টাকা ফেরত এনে জমা দেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে আরো জানাগেছে, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মাইসুরা বেগম। তার বাড়ী বরগুনার বামনা উপজেলায়। কাবিখা প্রকল্পের রতনশীলের বাসা থেকে আজিজ ডা. বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার দুপাশ মাটি দ্বারা ভরাট এর জন্য ১০০ মে.টন চাল বরাদ্দ হয়। ওই প্রকল্পের আজিজ ডা. ওই কর্মকর্তার বাবা।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ওই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য তুহিন আকন। তিনি প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তার বড় ভাই এর কাছের বন্ধু। এই প্রকল্প অনুমোদন করার জন্য ওই কর্মকর্তাকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ টাকা তার বড় ভাইয়ের ঢাকার মিরপুরের বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের প্রধান হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফার ব্যাংক হিসাবে বামনা কৃষিব্যাংক শাখা থেকে টিটি করেছেন তার বন্ধু তুহিন আকন। ঈদুল আজহার বন্ধের পূর্বে ২১ জুন ৪লাখ ও ২৫ জুন ৬ লাখ টাকা মন্ত্রনালয়ের ওই কর্মকর্তার ভাই এর ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়েছে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরগুনার বামনা সদর ইউনিয়নের ৫,৬ ও ৭নং ওর্য়াডের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য কাজল রেখা।
এদিকে ২১টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে ৪০টি প্রকল্পের অনুকুলে ৯০ লাখ টাকা টিআর এর অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পের সমুদয় টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিলো। তবে এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় সাইফুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির। মো. সাইফুল্লাহ নিজেই এই প্রকল্পগুলোর সাথে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে কোন টাকা তিনি আত্মসাত করেননি দাবী করেন। তিনি বলেন, গত বছর স্থানীয় সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন এর কাছ থেকে ৩৬টি ধর্মীয় প্রকল্পের জন্য জিআর এর চাল বরাদ্দ চেয়ে ডিও লেটার নিয়েছিলাম। ওই ডিও মন্ত্রনালয়ে জমা দিয়েছি। মন্ত্রনালয়ে তদবীর আমি করেছি। এবছর মন্ত্রনালয় ওই ডিও লেটারের ৩৬টি প্রকল্প ছাড়াও আরো ৪টি বাড়িয়ে ৪০টি প্রকল্পে ২লাখ ২৫ হাজার টাকা করে মোট ৯০লাখ টাকার টিআর বরাদ্দ দিয়েছে। প্রকল্প কমিটির কাছে প্রদান করা সমুদয় টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয় সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান জানান, তিনি এই প্রকল্প গুলোর বিষয়ে কিছুই জানেন না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংসদ সদস্যের দেওয়া ৩৬টি প্র্রকল্পের ডিও লেটার এর ছবি বর্তমানে ভাইরাল হয়েছে। ওই ডিওতে যে যে প্রকল্প জিআর এর বরাদ্দ পাওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছে ঠিক একই নামের প্রকল্পে টিআর এর জন্য বরাদ্দ পাঠিয়েছে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়।

বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অন্তরা হালদার বলেন, আত্মসাতকৃত ১কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে। বাকি টাকা দু একদিনের মধ্যে জমা হবে।
তবে এ ব্যাপারে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মাইসুরা বেগম বলেন,শেষ বছর হিসেবে মন্ত্রনালয় থেকে দুইটি এবং মন্ত্রী মহোদয়ের স্টাফ হিসেবে দুইটি প্রকল্প দিয়েছে। সেই চার প্রকল্পের দশ লাখ টাকা আমার বড় ভাইয়ের একাউন্টে এনেছিলাম।পরে কাজ করে দিব বলে।