বিমসটেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের রিট্রিটে বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। ছবি সংগৃহীত
জনস্বাস্থ্য মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগে জরুরি ত্রাণ সহায়তা ও মানবিক সংকট মোকাবিলায় একটি জরুরি ত্রাণ তহবিল গঠনে বিমসটেক দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
সোমবার (১৭ জুলাই) থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এই রিট্রিট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় আলোচনায় বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন আব্দুল মোমেন।
এশীয় মানবিক সহায়তা কেন্দ্রের (এএইচএ) মতো বিমসটেকও প্রতিষ্ঠান গড়তে বলে মত দেন তিনি। বিমসটেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের রিট্রিটে বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।
রিট্রিটে বিমসটেকের মহাসচিব ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও অংশ নেন। এ সময় তারা বিমসটেকের কলাকৌশল আরও জোরদার করতে নিবিড় আলোচনা করেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সংকটের অভিন্ন উদ্বেগগুলো নিয়ে তারা মতবিনিময় করেন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যখন বিমসটেক সম্পর্কিত আলোচনা করেন, তখন এই জোটের বাইরের অংশীদার কেমন হবে, সেদিকে তারা আলোকপাত করেন। ইমিনেন্ট পারসনস গ্রুপ প্রতিষ্ঠাসহ নিয়মিতভাবে বিমসটেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের রিট্রিট আয়োজনের প্রতি জোর দেন তারা।
১৯৯৬ সালে যখন বিমসটেক প্রতিষ্ঠা করা হয়, তখন এ জোটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা স্মরণ করেন বিমসটেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
জোটের বাইরের অংশীদারদের ধারণা, ইমিনেন্ট পারসনস গ্রুপ ও নিয়মিত বিমসটেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের রিট্রিট আয়োজনে সমর্থন ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বিতীয় রিট্রিটের আয়োজনেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে ঢাকা। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের (ইউএনজিএ) ফাঁকে প্রতিবছর একটি রিট্রিট আয়োজনেও সম্মত হয়েছেন বিমসটেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
মহামারি-পরবর্তী অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আন্তঃসীমান্ত ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম বা অর্থ লেনদেন ব্যবস্থা চালু, বিমসটেক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত, নার্সিং ও পর্যটনের সর্বোচ্চ চর্চা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির স্বীকৃতির প্রতিও জোর দেন আব্দুল মোমেন।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের বৈরী প্রভাব মোকাবিলায় বিমসটেক দেশগুলোর সরব হওয়ার প্রতিও জোর দেন তিনি। সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন বজায় রাখতে বিমসটেক অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার দিকে আলোকপাত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ জন্য মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।
আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ বন্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে সদস্যদেশগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করেন আব্দুল মোমেন। এ ছাড়াও মাদক ও মানব পাচার বন্ধে বিমসটেক দেশগুলোকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান বাংলাদেশের এই শীর্ষ কূটনীতিক।
বিমসটেক অঞ্চলে জ্বালানি নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা ও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গির কথাও তুলে ধরেন আব্দুল মোমেন। বিমসটেক রিট্রিট সফলভাবে শেষ হওয়ার পর ব্যাংককে গভর্নমেন্ট হাউসে থাই প্রধানমন্ত্রী প্রেদ্যুত চান-ও-চার সঙ্গেও দেখা করেন তিনি।
আর বৈঠকের ফাঁকে ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন আব্দুল মোমেন।
বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন বা বিমসটেক হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী সাত দেশের একটি জোট।
১৯৯৭ সালের ৬ জুন ব্যাংকক ঘোষণার মধ্য দিয়ে গঠিত হয় এ জোট। সদস্যদেশগুলোর মধ্যে পাঁচটি দক্ষিণ এশিয়ার। সেগুলো হলো: বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা এবং অন্য দুটি দেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড।