আদালতে সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। ফাইল ছবি
সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আজও ঢাকাসহ সারা দেশে বেসরকারি হাসপাতালে ও প্রাইভেট চেম্বারেও অস্ত্রোপচার বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করছেন চিকিৎসকরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখার খবর পাওয়া গেছে।
চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ঘটনায় বেসরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট চেম্বার ও অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকায় ব্যাহত হচ্ছে সেবা। পাশাপাশি প্রসূতি সেবাও দিচ্ছেন না চিকিৎসকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। তবে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক রয়েছে। ক্যামেরার সামনে কথা না বললেও আন্দোলনরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে সেবা দিলেও বেসরকারি হাসপাতালে কোনো ধরনের সেবাই দেবেন না তারা।
চিকিৎসকদের এমন আচরণে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন বেসরকারি হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরাও।
রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহের-এ-খোদা দীপ সময় সংবাদকে বলেন,
আমাদের হাসপাতালের বেশ কিছু কাজ বন্ধ রয়েছে। তার মধ্যে ওটি ও প্রাইভেট রোগী দেখা। এ ছাড়া জরুরি বিভাগ, ইনডোর ও ল্যাবরেটরির সবকাজ কিছু ঠিক মত চলছে।
সকালে এক গণমাধ্যমকর্মী তার সন্তানকে নিয়ে বেসরকারি একটি হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। চিকিৎসা সেবা না পেয়ে বাসায় ফিরে যেতে বাধ্য হন তিনি।
জানা গেছে, সেন্ট্রাল হাসপাতালে প্রসূতি ও নবজাতক মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসক গ্রেফতারের প্রতিবাদে সোমবার (১৭ জুলাই) ও মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সারা দেশে প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি বাংলাদেশ (ওজিএসবি)। দুই চিকিৎসককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ওজিএসবি ঘোষিত কর্মসূচিতে একাত্মতা জানিয়েছে চিকিৎসকদের অন্য সংগঠনগুলোও।
রাজধানীর গ্রিন রোডে অবস্থিত সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতক ও মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দুই চিকিৎসক মুনা সাহা ও শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানার জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত। গত ২১ জুন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূরের আদালত এ আদেশ দেন।
সেন্ট্রাল হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার (গাইনি) অধীন গত ৯ জুন ভর্তি হন মাহাবুবা রহমান আঁখি নামে এক প্রসূতি। তবে ওইদিন ডা. সংযুক্তা হাসপাতালেই ছিলেন না। পরে তার দুই সহযোগী চিকিৎসক আঁখির সন্তান প্রসব করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু জটিলতা দেখা দেয়ায় নবজাতককে এনআইসিইউতে রাখা হয়।
একই সঙ্গে আঁখির অবস্থার অবনতি হলে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে ১০ জুন বিকেলে আঁখির নবজাতক মারা যায়।
এ ঘটনায় আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র একটি মামলা করেন। মামলায় ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা, ডা. মুনা সাহা, ডা. বেগম মাকসুদা ফরিদা আক্তার মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকে আসামি করা হয়। এ ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে।
মামলা করার পর ১৫ জুন রাতে ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা সাহাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৮ জুন দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মাহবুবা রহমান আঁখিও।