ভারতের মণিপুরে দুই কুকি নারীকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানোর ভয়ঙ্কর ভিডিও প্রকাশের পর থেকেই তোলপাড় চলছে। এর মধ্যেই সামনে আরও একটি রোমহর্ষক ভিডিও। নতুন এই ভিডিওতে এক কুকি যুবকের কাটা মাথা দেখা গেছে।
শুক্রবার (২১ জুলাই) প্রকাশিত ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদন মতে, মণিপুরের কাটা মাথার একটি ভিডিও এখনও অনলাইনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাথাটি ডেভিড থিয়েক নামে এক কুকি যুবকের। তার বাড়ি রাজ্যের বিষ্ণুপুর জেলায়। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি আবাসিক এলাকায় বাঁশ দিয়ে তৈরি একটি বেড়ার ওপর ঝুলছে মাথাটি।
ভারতের উত্তরপূর্বের রাজ্য মণিপুরে গত প্রায় তিন মাস ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলছে। প্রধানত মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে চলমান এ সংঘাতে প্রায় দেড়শ’ মানুষের মৃত্যু, ৮০০-র বেশি গুরুতর আহত ও ২৯০টির বেশি গ্রামের সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি তছনছ হয়েছে।
প্রতিবেদন মতে, চলতি মাসের শুরুর দিকে (২ জুলাই) বিষ্ণুপুর জেলায় এক সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হন। তাদেরই একজন ডেভিড থিয়েক।
এর আগে সংঘাতের প্রথমদিকেই দুই কুকি নারীর ওপর ভয়াবহ যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটলেও এর একটি ভিডিও চিত্র গত বুধবার (১৯ জুলাই) রাতে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আসে। তাতে দেখা যায়, দুই নারীকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানো হচ্ছে।
বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানোর আগে তাদের গণধর্ষণ করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাধা দেয়ার চেষ্টা করায় নির্যাতনের শিকার এক নারীর ১৯ বছর বয়সী ভাইকেও হত্যা করা হয়েছে।
ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসতেই ভারতজুড়ে আলোড়ন শুরু হয়। নতুন করে জাতীয় রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে। সর্বত্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোই নয়, সুপ্রিম কোর্টও গভীর উদ্বেগ জানায়।
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ক্ষোভ ও উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, সরকারের উচিত এখনই ব্যবস্থা নেয়া। না হলে সুপ্রিম কোর্ট পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।
এরপরই এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত হুইরাম হেরোদাসও রয়েছেন। এছাড়া জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পুলিশের এত বেশি সময় লাগলো? কারণ এই ঘটনার পরেরদিনই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল এবং ঘটনা সঙ্গে জড়িতদের চেনাও যাচ্ছিল।
এছাড়াও এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই দুই নারীর আত্মীয়-স্বজন অভিযোগ করেছেন যে, ভয়ঙ্কর এই ঘটনার শিকার ওই দুই নারীকে পুলিশ হেফাজত থেকেই ছিনিয়ে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। এই ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া আরও দুইজন বলেছেন, পুলিশ ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিল। কিন্তু সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেনি।
ভুক্তভোগীদের এই অভিযোগ অস্বীকার করেনি পুলিশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। কারণ অভিযুক্তরা সংখ্যায় ‘অগণিত’ ছিল।
এক জেষ্ঠ্য সরকারি কর্মকর্তা বলেন, গত ৩ মে মনিপুর সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে পুলিশ এখন পর্যন্ত ৬ হাজারেরও বেশি অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগের তুলনায় মণিপুর পুলিশের সংখ্যা কম হওয়ায় পুলিশের অপরাধীদের ধরতে দেরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার যদি আরও আগে ভিডিওটি পেতো তাহলে দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হতো। বিবিসি জানিয়েছে, তারা এ বিষয়ে মণিপুর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পুলিশ কোনো সাড়া দেয়নি।
এদিকে দুই নারীকে বিবস্ত্র করে ঘোরানোর ভিডিও সামনে আসার পর মণিপুর আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে। এই ঘটনায় গ্রেফতার প্রধান আসামি হুইরাম হেরোদাসের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে কুকি নারীদের একটি দল।