লক্ষ্মীপুরে বিএনপি পদযাত্রায় ছুরিকাঘাতে খুন হওয়া সজিব। ছবি: সংগৃহীত
লক্ষ্মীপুরে বিএনপি পদযাত্রায় ছুরিকাঘাতে সজীব খুন হওয়ার ঘটনা নিয়ে নানামুখী বক্তব্য আসছে পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছ থেকে। তবে সজিব হত্যার ঘটনায় জেলা পুলিশের বক্তব্যে নাখোঁশ নিহতের পরিবার।
এদিকে ঘটনার পাঁচদিন পরেও এ ঘটনায় পুলিশ কোন আসামিকে শনাক্ত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। সজীবের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ খুনিদের চিহ্নিত না করে উল্টো ‘মিথ্যা’ তথ্য ছড়াচ্ছে। তাদের দাবি, সজীব যে কারনেই খুন হোক না কেন- পুলিশের উচিত খুনিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা।
গত ১৮ জুলাই (মঙ্গলবার) বিকেলে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের সামাদ মোড় সংলগ্ন কলেজ রোড এলাকায় ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারায় সজীব। একইদিন বিকেলে বিএনপির পদযাত্রা চলাকালীন ঘটনাস্থলে দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এর মধ্যেই সজীবকে ছুরিকাঘাত করা হয়। প্রাণে বাঁচতে ঘটনাস্থলের পাশেই মদিন উল্যা হাউজিং এর ফিরোজা টাওয়ারে দ্বিতীয় তলায় উঠে পড়ে রক্তাক্ত সজীব। সেখানে প্রাণ হারায় সে। দীর্ঘসময় পর পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে তার পরনে থাকা প্যান্টের পকেট থেকে কৃষকদল লেখা ব্যাচ এবং ক্যাপ বের করা হয়।
জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে কৃষকদলের সক্রিয় কর্মী এবং ছাত্রলীগ নেতাদের ছুরিকাঘাতে হত্যার কথা বলা হয়। কিন্তু ঘটনাকে রাজনৈতিক হত্যা হিসেবে বলছে না পুলিশ।
পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফের দাবি, পাওনা টাকা ও বিয়ে সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সজীবকে খুন হতে হয়েছে। সে বিএনপির পদযাত্রায় যোগ দিতে লক্ষ্মীপুর শহরে আসেনি। সজিব বিএনপির কর্মী নন। পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের যে স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে, ওইস্থান থেকে সজীব হত্যাকাণ্ডের স্থান দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে।
কিন্তু পুলিশের এ দাবিকে ‘মিথ্যাচার’ বলছে বিএনপি এবং নিহতের পরিবার। সজীবের বোন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পুলিশ বলছে আমার ভাইকে নাকি টাকার জন্য মেরে ফেলছে, বিয়ের জন্য মেরে ফেলছে। এগুলো মিথ্যা। আমার ভাই (সজীব) এখনো ছোট। আমাদের আরো বড় দুই ভাই আছে। তারাও বিয়ে করেনি। তাহলে সজীব কিভাবে বিয়ে করলো, তার বৌ কই, কোথায় তার বাচ্চা? পুলিশ কিভাবে এসব মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে?’
তিনি বলেন, সজীব যদি টাকার জন্য মরতো, তাহলে চন্দ্রগঞ্জ থেকে বিএনপির সমাবেশে লক্ষ্মীপুরে গেল কেন? পুলিশ কেন সত্যিতা বলছে না? কে আমার ভাইকে মারলো? আমার দাবি- আমার ভাইয়ের হত্যার সুষ্ঠু বিচার। যারা আমাদের বুক খালি করছে, তাদের বিচার চাই।
সজীবের মেঝো ভাই সুজন বলেন, আমার ভাই মরার পর অনেক কথা-বার্তা আসছে, সে নাকি বিয়ে করছে। সে তো আমাদের ছোট। সে বিয়ে করে নাই। আমরা বড় দুই ভাইতো বিয়ে করিনি। অনেকে বিভ্রান্তিমূলক কথা বলতেছে, এগুলো দেখে তো সহ্য করতে পারছি না। সে বিএনপি পদযাত্রায় গিয়েই মারা গেছে। আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই, যারা মেরেছে তাদের ফাঁসি চাই।
সজীবের বাবা আবু তাহের জানান, সজীব ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। এখন কাজ করতো। পাশাপাশি ড্রাইভিং শিখছে বিদেশ যাওয়ার জন্য। অর্ধেক শেখাও হয়েছে।
তিনি বলেন, দল করা কি অপরাধ? সে যে কোন দল সাপোর্ট করতেই পারে। সেজন্য কি তাকে মেরে ফেলতে হবে? আমরা দিনমজুর, কৃষক। সেও দিনমজুর, কৃষক। আমার ছেলে দলের জন্য মারামারি করবে, নিজের জীবন দিবে- সে এ ধরনের ছেলে না।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাছিবুর রহমান বলেন, সজীব জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সক্রিয় কর্মী। তাদের পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। তাদের বাড়ি বিএনপি অধ্যুষিত বাড়ি। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়, পুলিশ এখানে অতি উৎসাহী হয়ে যে ভূমিকা রাখছে, প্রকারন্তে খুনিদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। সজীবের পরিবার খোঁজ-খবর নিয়ে এজাহার করতে চেয়েছে, কিন্তু তড়িঘড়ি করে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে একটি এজাহার নিয়েছে, যাতে খুনিরা আড়াল হতে পারে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, বিএনপির পদযাত্রা চলাকালীন সময় কৃষকদল কর্মী সজীবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ সুপারসহ উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের সরাসরি মদদেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের সবার বিচার হবে। আমরা মামলার প্রস্তুতি নিয়েছি। এ পুলিশ সুপারসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হবে।