অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আনসার মোড়ল। ছবি: সংগৃহীত
চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এক শিশুর মা বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত আনসার মোড়ল (৬৫) বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের পলশা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একই ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।
গত বুধবার (১৯ জুলাই) দুপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আনসার মোড়লের মুদিখানার দোকানে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কয়েক দফায় স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়ায় এক শিশুর মা গত শনিবার (২২ জুলাই) বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা, ভুক্তভোগী শিশুর পরিবার জানায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে রয়েছে আনসার মোড়লের মুদি দোকান। দোকানে টিফিনের জন্য খাবার নিতে গেলে পর্যায়ক্রমে তিন শিশুকে যৌন নিপীড়ন করে আনসার মোড়ল। এ সময় আনসার মোড়ল তিন শিশুর হাতে ৫০০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে ঘটনাটি কাউকে বললে ছুরি দিয়ে কেটে বস্তায় ভরে মহানন্দা নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।
রোববার (২৩ জুলাই) রাতে সদর মডেল থানায় কথা হয় নিপীড়নের শিকার ১১ বছর বয়সী এক শিশুর সঙ্গে। ভুক্তভোগী ওই শিশু কাঁদতে কাঁদতে বলে, টিফিনের সময় তিনজন মিলে খাবার কেনার জন্য আনসার আলীর দোকানে যায় তারা। এ সময় দোকানের তেতরে নিয়ে পর্যায়ক্রমে যৌন নিপীড়ন করা হয় তাদের। এ সময় তারা কান্নাকাটি করে ছেড়ে দেয়ার জন্য বলে। পরে তাদের হাতে টাকা দিয়ে ঘটনাটি কাউকে বললে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আকবর আলী বলেন, আনসার মোল মাঝে মধ্যেই শিশুদের যৌন নিপীড়ন করেন। আগেও একাধিক শিশুর সাথে পাশবিক ঘটনা ঘটিয়েছে। যা এলাকার সাধারণ মানুষ সবাই জানে। কিন্তু প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।
বালিয়াডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য (মেম্বার) ফজলে রাব্বি রেনু বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আনসার মোড়ল নিজ দোকানে দরজা আটকে শিশুদের যৌন নিপীড়ন করে আসছিল। একই সঙ্গে তিন শিশুর ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্কুলের অন্য শিশুরাও আতঙ্কিত।
বালিয়াডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো.সাদিকুল আলম বলেন, শিশুদের পরিবারের লিখিত অভিযোগ পেয়ে আনসার মোড়লকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে যৌন নিপীড়নের কথা শিকার করে তিনি মীমাংসার জন্য অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তি নিয়ে শনিবার একটি বাড়িতে সমাধানের জন্য বসা হয়। সেখানে সমাধান হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে থানায় মামলা করতে বলা হয়েছে।
স্কুল ও শিশুদের সম্মান রক্ষার্থে বিষয়টি নিয়ে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, ঘটনা কি ঘটেছে সেটি শিশুদের পরিবার বলতে পারবে। আমি মৌখিকভাবে শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি।
জানতে চাইলে বালিয়াডাঙা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাম্মাদ আল রাজিব বলেন, ঘটনা প্রমাণিত না হলে একজনকে অপরাধী বলা যাবে না। এখানে গ্রামের রাজনীতি থাকতে পারে। বিষয়টি জানার পরে মন্তব্য করা যাবে।
এদিকে বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও আনসার মোড়লের পরিবারের পক্ষ থেকে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
তদন্ত কর্মকর্তা সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আফজাল হোসেন বলেন, ঘটনা তদন্ত চলছে। মামলা রেকর্ড করা হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তিন শিশু নিপীড়নের অভিযোগে একজনের মা বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনাটি তদন্ত চলছে। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।