নওগাঁয়া বৃষ্টির অভাবে ধানক্ষেত ফেটে চৌচির। ছবি সংগৃহীত।
এক মাস বৃষ্টি নেই। তীব্র খরায় রোপণ করা ধানক্ষেত ফেটে চৌচির। শত শত বিঘা জমির ধান পুড়ে যেতে বসেছে নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকার মাঠে। কিছু কৃষক দূর দূরান্ত থেকে ফিতা পাইপের সাহায্যে জমিতে সেচ দেয়ার চেষ্টা করলেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। কৃষি বিভাগ বলছে, সহসাই বৃষ্টি না হলে এ জেলায় ঝুঁকির মধ্যে পড়বে আমন চাষাবাদ।
ঋতুর পালাবদলে প্রকৃতিতে এখন ভরা বর্ষাকাল, শ্রাবণের আকাশে মেঘের আনাগোনার নেই কমতি। কিন্তু মেঘের লুকোচুরি থাকলেও ভিন্ন এক প্রকৃতি দেখতে হচ্ছে বরেন্দ্রবাসীকে।
গত প্রায় ১ মাস ধরেই তপ্ত রোদ আর তীব্র খরায় নওগাঁর মাঠে থমকে গেছে রোপা আমন ফসল চাষাবাদ । আকাশের বৃষ্টির আশায় যেসব চাষি রোপা আউশ চাষ করেছেন এসব ধানের ক্ষেত এখন পানি সংকটে ফেটে চৌচির। গেল বছর জুন পর্যন্ত এ জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল ৩ হাজার ৬৬৪ মিলিমিটার আর এবার জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে তা রেকর্ড করা হয় মাত্র ১১৭০ মিলিমিটার। অনাবৃষ্টি আর তীব্র খরায় রোপণ করা ধান নিয়ে উদ্বিগ্ন চাষিরা।
চাষিদের মধ্যে নওগাঁ সদরের পাহাড়ুর এলাকার চাষি আনিছুর, জুলফিকার জানান, ধান রোপণ করেছেন এক মাস হলো। কিন্তু পানি দিতে পারছে না। এতে মাঠ ফেটে ধান নষ্ট হতে বসেছে।
জেলার নিয়ামতপুর উপজেলায় বাহাদুরপুর এলাকার চাষি গোলাম মোস্তফা জানান, ধান ঘরে তোলা সম্ভব হবে না। আশপাশের জলাশয়গুলোতে পানি নেই, যা দিয়ে ফসল রক্ষা করা যায়।
এদিকে ফসল রক্ষায় স্যালোমেশিনের সাহায্যে ফিতা পাইপ দিয়ে ডোবা বা নালা থেকে সেচ দেয়ার চেষ্টা করছেন কৃষকরা। ফসল রক্ষায় আড়াই হাজার গভীর নলকূপ চালু করেছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তবে সেচ দিতে বাড়তি খরচের বোঝা চেপেছে কৃষকের ঘাড়ে।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে কৃষকের বাড়ছে খরচের খাত। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নওগাঁ সদর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে সব গভীর নলকূপগুলো সচল করার জন্য মাঠ পর্যায়ে বলা হয়েছে।
আর সহসাই বৃষ্টি না হলে বরেন্দ্র এলাকায় আমন উৎপাদনে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মুনজুর মওলা।
তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আউশ চাষাবাদ করা হয়। আর ১ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও বৃষ্টির অভাবে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধান রোপণ হয়েছে।
বরেন্দ্র এলাকায় বৃষ্টি পাতের হার ২০২২ মে মাস ১৬২ মিলি মিটার, ২০২৩ মে মাস ৬১ মিলিমিটার, ২০২২ জুন মাস ৯০ মিলিমিটার, ২০২৩ জুন মাস ৩৮ মিলিমিটার, ২০২২ জুলাই ১১৪ মিলিমিটার ও ২০২৩ জুলাই ৮০ মিলিমিটার।