পটুয়াখালী সদর উপজেলায় গৃহবধূ কুলসুম বেগমকে মারধরের পর ঘরে ঢোকানোর চেষ্টা। ছবি সংগৃহীত।
পটুয়াখালী সদর উপজেলায় যৌতুকের এক লাখ টাকার জন্য স্ত্রীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছেন তার স্বামী। এ সময় স্থানীয়রা ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ছেড়ে দিলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। এ নিয়ে জনমনে সমালোচনার ঝড়ও ওঠে।
কুলসুম বেগম উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের আবদুর রব মুন্সির মেয়ে।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ঘর থেকে বাইরে লাফিয়ে বের হন গৃহবধূ কুলসুম। তার নাক-মুখ রক্তাক্ত; ব্যথায় ছটফট করে বাড়ির বারান্দায় গড়াগড়ি খাচ্ছিলেন। এর একপর্যায়ে ওই নারীকে তার স্বামী ও শাশুড়ি টেনে আবারও ঘরে ঢোকানোর চেষ্টা করেন। এ সময় স্থানীয়দের জড়ো হতে দেখা যায়।
মামলার এজাহারে ও নির্যাতনের শিকার নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৯ বছর আগে পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের ফারুক প্যাদার সঙ্গে একই উপজেলার কুলসুম বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের জন্য কুলসুম বেগমকে চাপ দিতে থাকেন স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন। তাদের সংসারে ৬ বছরের কন্যা ও দেড় বছরের একটি ছেলে সন্তান আছে। এক পর্যায় বিদেশে যাওয়ার জন্য এক লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে দাবি করেন ফারুক প্যাদা ও তার পরিবার। বার বার তার স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য চাপ দেন। যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানালে স্বামী ফারুক প্যাদা তার, মা কহিনুর বেগম ও ননদ মিলে স্ত্রীকে প্রায়ই মারধর করতেন।
গত ২০ জুলাই কুলসুমকে বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা এনে দিতে বলেন। টাকা আনতে অস্বীকৃতি জানালে কুলসুম বেগমকে মারধর করে আহত অবস্থায় ঘরে বন্ধ করে রাখেন তারা। পরবর্তীতে ইউপি সদস্যর সহযোগিতায় কুলসুমের বাবা-মা তাকে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করেন। দীর্ঘ ৬ দিন চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার বাড়িতে ফিরে যান। এ নিয়ে কুলসুম পটুয়াখালী বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের প্রথম আদালতে যৌতুক মামলা করেন; যার নং এম পি ৩০/২০২৩।
কুলসুমের মা কহিনুর বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর থেকেই তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন অনেক নির্যাতন করেন। তারা বিভিন্ন সময়ে স্বর্ণের গহনা চায় আবার গরু কিনে দিতে বলেন। এ ছাড়াও বিদেশে যাওয়ার জন্য তারা এক লাখ টাকা দাবি করেন। এই টাকা না দিতে পারায় আমার মেয়েকে তারা মারধর করে ঘরে বন্দি করে রাখেন। এরপরে আমরা মেম্বারের সহযোগিতায় তাকে নিয়ে হাসপাতালে যাই। এই নির্যাতনের আমি বিচার চাই।
কুলসুম বেগমের বাবা আব্দুর রব মুন্সী বলেন, আমার মেয়েকে মারধর করতেছে এরকম ঘটনা শোনার পরে আমরা দৌড়ে তার বাড়িতে যাই। তারপরে দেখি আমার মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। আমার মেয়েকে বিভিন্ন সময়েই তারা গরু কিনে দিতে বলে অথবা স্বর্ণের জিনিস চায় আবার নগদ টাকাও চায়। এ জন্য আমার মেয়েকে তার স্বামীসহ তিনজনে মিলে মেরেছে। আমি এর বিচারের জন্য মামলা দায়ের করেছি। আমি গরিব মানুষ এই মেয়ে ও দুই নাতির ভরণপোষণ বহন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি এই নির্যাতনের বিচার চাই এবং আমার মেয়ে যেন ওই ঘরে শান্তিতে থাকতে পারে সেই দাবি জানাই।
নির্যাতিত কুলসুম বেগম বলেন, যৌতুকের টাকা নিয়ে প্রায় সময়ে আমার ওপরে অত্যাচার করা হয়। বিদেশ যাওয়ার কথা বলে আমার বাবার বাড়ির জায়গা জমি বিক্রি করে এক লাখ টাকা এনে দিতে বলেন। এর আগেও কয়েকবার আমাকে মারধর করে আমার বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিল। আবার যখন তাদের বাড়িতে কাজ করার লোক পায় না তখন আমাকে আবার নিয়ে কাজ করান, কাজ শেষ হয়ে গেলে আবার বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এই টাকার জন্য আমার ছেলে মেয়েকে তারা চোখে দেখতে পারে না; ওদের ভালোবাসে না।
তিনি আরও বলেন, সেদিন আমার চুল ধরে খাটের সঙ্গে ধাক্কা দেয় এবং আমার পিঠে কিল ঘুষি দেয়। বড় একটি লাঠি দিয়ে আমাকে মারতে থাকে এক পর্যায়ে আমার নাক থেকে রক্ত বের হলে আমি ঘরের বাইরে লাফিয়ে পড়ি। এরপর আবার আমাকে তারা ধরে নিয়ে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে।
এদিকে এ ঘটনার পর থেকে স্বামী ফারুক প্যাদা গা ঢাকা দিয়েছেন। তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে অ্যাড. ফরিদ আহমেদ আবির বলেন, বিজ্ঞ আদালত মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পটুয়াখালী সদর থানার ওসিকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন।