ভিন্ন দাবিতে আবারও রাজধানীতে সমাবেশ করবে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ক্ষমতাসীনদের চাওয়া, বড় জমায়েতের মাধ্যমে বিএনপির সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জাগরণ সৃষ্টি করা। আর বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে আসতে পারে আন্দোলনের গতি পাল্টানোর ঘোষণা। তবে সব ছাপিয়ে একই দিন বড় দুই দল মহাসমাবেশ ডাকায় বরাবরের মতো এবারও শঙ্কিত ঢাকাবাসী।
সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে তিনটি কর্মসূচি শেষ করেছে বিএনপি। সপ্তাহ না পেরোতেই আবারও মহাসমাবেশ। দাবি সেই একই–এই সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন। এখন আগামীকালের (বৃহস্পতিবার) মহাসমাবেশ ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
তবে দলটির কর্তারা বলছেন, এবারের মহাসমাবেশ থেকে নির্দলীয় সরকারের দাবি মানার জন্য বর্তমান সরকারকে একটা সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতে পারে।
এরই মধ্যে বিএনপি নেতারা নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যেকোনো একটিতে সমাবেশ করার বিষয়ে অবহিত করে পুলিশকে চিঠি দিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি পায়নি দলটি। তবে দলটির কর্তারা আশা করছেন, সমাবেশের অনুমতি পাবেন। পাশাপাশি জনসমাগম বাড়ানোর পাশাপাশি মহাসমাবেশে জনসম্পৃক্ততা থাকবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করবে জনগণ। সরকারের পদত্যাগের জন্য এবার সময় বেঁধে দেয়া হবে। ঢাকার সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি আসলে সবাইকে একযোগে রাজপথে নামতেও আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা।
এদিকে তরুণদের নির্বাচনমুখী করতেই তারুণ্যের জয়যাত্রা শিরোনামে আগামীকাল মহাসমাবেশ করবে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ছাত্রলীগ। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সহযোগী সংগঠনের এই আয়োজনে যোগ দেবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতারা বলছেন, তরুণদের নির্বাচনমুখী করার পাশাপাশি বিএনপির সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জাগরণ সৃষ্টির বার্তা আসবে সমাবেশ থেকে। এ ছাড়া বিএনপি-জামায়াতের অপতৎপরতা থেকে সতর্ক থাকতে ও যেকোনো সহিংসতা প্রতিরোধে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সতর্ক পাহারায় থাকার নির্দেশ দেয়া আছে ক্ষমতাসীনদের।
পাশাপাশি ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও মহাসমাবেশে আসতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দলটির টার্গেট দুই লাখ লোকের জমায়েত করা।
একই দিন দুই দলের সমাবেশ হলেও আওয়ামী লীগ কোনো সংঘাতে যাবে না বলে মঙ্গলবারের যৌথ সভায় বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা সংঘাত করব না। আমরা মাঠে সতর্ক থাকব। যারা সংঘাত করতে আসবে, তাদের প্রতিহত করব। নির্বাচন পর্যন্ত সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
একই সুরে কথা বললেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। বলেন, যারা উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বাধা হবে, তাদেরই প্রতিরোধ করা হবে। আন্দোলনের নামে রাজনীতির মাঠ অরাজকতা করার সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না।
এদিকে একাধিক দলের সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। বলেছেন, কর্মসূচির আশপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, ডগ স্কোয়াডের তৎপরতা বাড়ানো হবে।
এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজধানী অচল না করতে পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, বৃহস্পতিবার কর্মদিবস। সেদিন ঢাকাকে যানজটে নাকাল করে দেয়া যাবে না। রাজনৈতিক দলগুলো যাতে ভবিষ্যতে ওয়ার্কিং ডেতে না দিয়ে বন্ধের দিনগুলোতে কর্মসূচি দেয়। এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি লাঠিসোঁটা ও ব্যাগ নিয়ে সমাবেশে না আসার অনুরোধ জানান ডিএমপি কমিশনার।