কয়েকদিন ধরে নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে সমাবেশের অনুমতি পেলো বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের তিন অঙ্গ সংগঠন। শুক্রবার (২৮ জুলাই) দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ আর নয়াপল্টনে বিএনপি। অথচ দুইটি সমাবেশস্থল দুই কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে। এতে সহিংসতার আশঙ্কা করছে সাধারণ মানুষ। উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। প্রশ্ন উঠছে, কেন দুইটি রাজনৈতিক দলকে একই দিনে এতো কাছাকাছি সমাবেশের অনুমতি দেয়া হলো?
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, বিএনপি কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে রাজারবাগ মোড় পর্যন্ত সমাবেশ করতে পারবে। আর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে মহানগর নাট্যমঞ্চ পর্যন্ত সমাবেশ করবে। কোনভাবেই নির্ধারিত স্থানের বাইরে যাওয়া যাবে না।
এছাড়া সহিংসতা রোধে লাঠিসোটা ও ব্যাগ বহনে নিষেধাজ্ঞা এবং উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য না দেয়ার মতো কিছু শর্তও দিয়েছে ডিএমপি।
এছাড়া নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্তসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে; স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশের স্থলে, অভ্যন্তরে ও চারিদিকে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে; নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশে আগতদের হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে বলেও শর্ত দেয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
তবে এ সবকিছুর পরেও সংঘাতের আশঙ্কা কাটছে না। আওয়ামী লীগের সহযোগী তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের সমাবেশে প্রায় ৫ লাখ মানুষের সমাগম হবে। অপরদিকে বিএনপিও বড় জমায়েত আশা করছে। এরিমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী রাজধানীতে জড়ো হয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে নগরবাসীর মনে প্রশ্ন উঠেছে, বিকল্প ভেন্যু থাকা সত্ত্বেও কেন এতো কাছাকাছি বড় দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হলো?
এ বিষয়ে কথা হয় নয়াপল্টনের ব্যবসায়ী হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন থেকেই টেনশনে আছি। শুক্রবার সমাবেশের জন্য দোকান বন্ধ রাখবো ঠিকই কিন্তু তাও যদি সংঘাত হয়! কাছাকাছি জায়গায় সমাবেশ দেয়াতে এই ভয়টা বেশি কাজ করছে। কি যে হবে বুঝতেসি না।’
কথা হয় দৈনিক বাংলা এলাকার আরেক বাসিন্দা সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন থেকে রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত। কয়েকদিন আগেও ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ঝামেলা হয়েছে। তাই এদিনও ঝামেলা হতে পারে। তার ওপর দুইটা সমাবেশস্থল বাসার কাছে হওয়ায় বেশি ভয়ে আছি। কেন যে দুই দলকেই পাশাপাশি জায়গায় সমাবেশ করতে দিলো!’
এ বিষয়ে ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তাকে ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।
সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবি আদায়ে তিনটি কর্মসূচি শেষ করেছে বিএনপি। সপ্তাহ না পেরোতেই আবারও মহাসমাবেশ। দাবি সেই একই–এই সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন।অন্যদিকে তরুণদের নির্বাচনমুখী করতেই তারুণ্যের জয়যাত্রা শিরোনামে মহাসমাবেশ করবে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ।
তবে সমাবেশের দিন ও ভেন্যু নিয়ে চলে নাটকীয়তা। দুদলই বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সমাবেশের ঘোষণা দেয়। বিএনপি নয়াপল্টন অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল, কিন্তু সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে রাজধানীতে যানজটের আশঙ্কায় নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি ডিএমপি।
ডিএমপির পক্ষ থেকে বিএনপিকে গোলাপবাগ মাঠে এবং আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনকে বায়তুল মোকাররমের পরিবর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জিমনেশিয়াম (ব্যায়ামাগার) মাঠ অথবা মহানগর নাট্যমঞ্চে সমাবেশ করতে বলা হয়।
পরে গতরাত নয়টায় এক অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক দিন পিছিয়ে আগামীকাল শুক্রবার মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। বিএনপির নতুন ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের পক্ষ থেকেও শুক্রবার সমাবেশের নতুন তারিখ ঘোষণা দেয়া হয়।
এর কিছুক্ষণ পরই যুবলীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশের অনুমতি না দেয়ায় তারা আগারগাঁওয়ের পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে পূর্বঘোষিত সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আগামীকাল এই স্থানের পাশেই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিচারপতিদের নিয়ে রাষ্ট্রপতির একটি অনুষ্ঠান থাকায় তারা আবার বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটেই সমাবেশ করতে চায় বলে বৃহস্পতিবার দুপুরে জানান দলটির সহযোগী সংগঠনের কয়েক নেতা।
অবশেষে দুদলকেই তাদের পছন্দের স্থানে সমাবেশের অনুমতি দেয় ডিএমপি।