নিত্যপণ্যের বাজারে কমতে শুরু করেছে দাম। ছবি একুশে বিডি।
সপ্তাহ ব্যবধানে স্বস্তি ফিরেছে নিত্যপণ্যের বাজারে। দাম কমেছে প্রায় সব ধরনের শাকসবজির। দেশি মাছের দামও নিম্নমুখী। এদিকে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে ব্রয়লারের দাম।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, কালীগঞ্জ ও আগানগর, পুরান ঢাকার শ্যামবাজার ও রায়সাহেব বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
নিত্যপণ্যের লাগামহীন বাজারে কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। এতে কিছুটা স্বস্তিতে ভোক্তারা। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিপ্রতি সবজির দাম কমেছে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত।
সরেজমিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রতিকেজি বেগুন ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, টমেটো ২০০ থেকে ২২০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতিকেজি পুঁইশাক ২৫ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, পেঁপে ৩৫ টাকা, কাঁকরল ৬০ টাকা, আলু ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ ও শসা ৩০ থেকে ৪০ ও লতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। আর প্রতিপিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতির দিকে। সরবরাহ ঠিক থাকলে দাম আরও কমবে।
আনিস মোল্লা নামে এক বিক্রেতা বলেন,
ঈদের পর থেকে সরবরাহ ঘাটতির জন্য কয়েক সপ্তাহ সবজির দাম কিছুটা চড়া ছিল। তবে পরিবহন ব্যবস্থা পুরোপুরি সচল হওয়ায় বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। তাই দাম কমছে।
আব্দুল হাকিম নামে আরেক বিক্রেতা জানান,
বাজারে প্রায় সব ধরনের শাকসবজির দামই কমতির দিকে। মূলত বাজারে সবজির আমদানি বেড়েছে। এতে দাম কমছে। সরবরাহ ঠিক থাকলে, দাম আরও কমতে পারে।
এবার বিক্রেতার সুরে সুর মেলালেন ক্রেতারাও। তারা জানান, সবজির দাম কমছে। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজারে।
সাব্বির হোসাইন নামে এক ক্রেতা বলেন,
বাজারে শাকসবজির দাম কমতির দিকে। গত সপ্তাহে ৩০০ টাকায় বিক্রি হওয়া টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়, ১০০ টাকার বেগুন নেমেছে ৬০ টাকায়। তবে দাম আরও কমলে ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে আসবে।
এদিকে কয়েক মাস ধরে ওঠানামা করা মরিচের বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছিল ১৮০ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, পাইকারি পর্যায়ে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়। পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়লে খুচরা বাজারেও দাম বাড়ে।
সবুজ আলী নামে এক মরিচ বিক্রেতা জানান, বাজারে দেশি কাঁচা মরিচের সরবরাহ বেড়েছে। পাশাপাশি ভারত থেকেও প্রচুর পরিমাণে মরিচ আসছে। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ায়, খুচরা পর্যায়েও দাম বেড়েছে।
তবে কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসতে শুরু করলেও, বাজারে ঊর্ধ্বমুখী শুকনা মরিচের দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৩০ টাকা পর্যন্ত।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত মরিচ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে দাম বাড়ছে শুকনা মরিচের। কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানালেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, খুচরা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে শুকনা মরিচের।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের মের্সাস রাজবাড়ী ভান্ডারের আব্দুল আজিজ বলেন,
পাইকারি পর্যায়ে প্রতিকেজি শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায়। কোনো সরবরাহ ঘাটতি নেই। খুচরা পর্যায়ে কারসাজি চলছে।
এদিকে স্বস্তির খবর রয়েছে মাছের বাজারে। কমতে শুরু করেছে দেশি মাছের দাম। বাজারে সরবরাহ বেড়েছে ইলিশ, শিং, কই, মাগুর ও পুঁটিসহ হরেক রকমের মাছের।
সরেজমিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে আকারভেদে প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতারা বলেন, বাজারে ইলিশের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতির দিকে।
হরিপদ দাস নামে এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন,
আড়তগুলোতে প্রচুর ইলিশের সরবরাহ রয়েছে। আড়তে দাম কমায়, খুচরা পর্যায়েও সস্তায় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি টেংরা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতিকেজি দেশি মাগুর ১ হাজার ৩০০ টাকা, দেশি শিং ১ হাজার ৪০০ টাকা ও শোল ১ হাজার টাকা, পুটি ২০০ টাকা, ফলি ৪০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ টাকা, আইড় ৬০০ টাকা ও নদীর পাঙাশ ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর প্রতিকেজি রুই ৩৭০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতল ৩৮০ থেকে ৪৩০ টাকা, রূপচাঁদা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, পাবদা ৭০০ থেকে ৮০০, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা ও তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়।
কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজারের বিক্রেতা বাদশা ব্যাপারী জানান,
খাল-বিলে পানি বেড়েছে। এতে জালে ধরা পড়ছে দেশি মাছ। যার ফলে দাম কমছে দেশি মাছের। আগামী দু-এক মাস দেশি মাছের দাম কিছুটা কমই থাকবে।
দাম কমেছে ব্রয়লার মুরগিরও। সপ্তাহ ব্যবধানে ১০ টাকা কমে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। এছাড়া প্রতিকেজি সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে সরবরাহ বাড়ায় মুরগির দাম কমেছে। ইকরামুল নামে এক বিক্রেতা বলেন,
বাজারে মুরগির চাহিদা খুব একটা নেই। পাশাপাশি বেড়েছে সরবরাহের পরিমাণ। তাই কেজি প্রতি ১০ টাকা দাম কমেছে।
দাম কমেছে মুরগির ডিমেরও। বাজারে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি ডজন হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।
আর বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা ও প্রতিকেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। বিক্রেতারা জানান, গত রোজার ঈদের পর থেকে গরু ও খাসির মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
তবে কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে আদা ও রসুনের দাম। বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। আর আমদানিকৃত রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। এ ছাড়া মানভেদে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকায়।
স্থিতিশীল রয়েছে চালের বাজারও। নতুন করে দাম বাড়েনি কোনো চালের। বিক্রেতারা বলেন, বাজারে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি মোটা স্বর্ণা ২ হাজার ২৫০ টাকা, চিকন স্বর্ণা ২ হাজার ৩৫০ টাকা, আটাশ ২ হাজার ৪৩০ থেকে ২ হাজার ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজরে কিছুটা নিম্নমুখী ডাল, আটা ও ময়দার দাম। প্রতিকেজি খোলা আটা ৪৫ টাকা ও প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। প্রতিকেজি ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা। আর লাগামহীন চিনি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়।
তবে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৯ টাকায় বিক্রি হলেও খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে । প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, এরই মধ্যে নতুন দামের প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল বাজারে এসেছে। বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত দামেই। তবে খোলা সয়াবিন তেল মিল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ না হওয়ায় দাম বাড়তি।
এর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় চলতি মাসের ১১ জুলাই দেশের বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১০ টাকা কমিয়ে ১৭৯ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৮ টাকা কমিয়ে ১৫৯ টাকায় বিক্রির কথা জানায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
নিত্যপণ্যের এ অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।
আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।