সুনামগঞ্জে রাজনা হত্যা মামলায় গ্রেফতার চাচাতো ভাই সালমান মিয়া। ছবি: সংগৃহীত
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়ায় সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সপ্তম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী রাজনা হত্যা মামলায় তার আপন চাচাতো ভাই সালমান মিয়া (২৪) ও চাচি আইরুননেছাকে (৫২) গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বুধবার (২৬ জুলাই) তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।
গ্রেফতারের বিষয়ে জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুভাশীষ ধর জানান, সালমান মিয়া ও তার মা আইরুননেছা রাজনা আক্তার হত্যাকাণ্ডের পর থেকে অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন। দুজনের কথাবার্তা এবং আচরণ ছিল সন্দেহজনক। রাজনার মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসার পর সালমানের কথাবার্তায় অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। পরে সালমানের ঘর থেকে বস্তা, রড ও রশিসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধারের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গত ২২ জুলাই ভোরে রাজনা আক্তার কেয়া বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। ১৪ ঘণ্টা পর দিরাই উপজেলার শরীফপুর গ্রামের তালুকদার বাড়ির সীমানায় তার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
রাজনা আক্তারের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বাবা ইসরাঈল মিয়া বলেন, আপন ভাই সিজিল মিয়াকে নিয়ে একই বাড়িতে বসবাস করলেও দুজনের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। সালমান মিয়ার মা আইরুননেছা ও রাজনা আক্তারের মা জাহানারা বেগমের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল না। কয়েক বছর আগে চুলা তৈরির মাটি সংগ্রহ করা নিয়ে তাদের ঝগড়া হয়। ওই সময় আইরুননেছার নির্দেশে ছেলে সালমান তার আপন চাচি ও চাচাতো বোনকে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পারিবারিক বৈঠকে বিষয়টি সমাধান করা হয়। এক বছর ধরে দুজনের স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিল।
রাজনার নিখোঁজ হওয়ার প্রশ্নে ইসরাঈল মিয়া জানান, গত শুক্রবার (২১ জুলাই) রাতে বাড়ির পাশে হাওড়ে মাছ ধরার জন্য যান। ঝড়ের কারণে গভীর রাতে বাড়িতে ফিরে আসেন। ঘরে এসে দেখেন তার দুই মেয়ে ও নাতিন এক বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। শনিবার (২২ জুলাই) ভোরে আজানের পর ঘরের পেছনে দুটি দরজা খোলা দেখতে পেয়ে স্ত্রীর কাছে জানতে চান দরজা খোলা কেন? রাজনা আক্তার বিছানায় নেই। মেয়েকে দেখতে না পেয়ে স্ত্রীকে বলেন বাথরুমে দেখে আসার জন্য।
পরে আরও বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে বিকেলে শান্তিগঞ্জ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে যান রাজনার বাবা-মা।
এ সময় গ্রামের এক ইউপি সদস্য ইসরাঈল মিয়াকে ফোন করে বলেন, দিরাই উপজেলার শরীফপুর গ্রামের তালুকদার বাড়ির সীমানাপ্রাচীরের পাশে একটি বস্তা পাওয়া গেছে। বিষয়টি ইউপি সদস্য দিরাই ও শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশকে অবহিত করেন। পরে সেখানে গিয়ে দুই থানার পুলিশের উপস্থিতিতে রাজনা আক্তারের মরদেহ শনাক্ত করেন।
রাজনা আক্তারের বড় বোন শিপা আক্তার বলেন, শনিবার রাতে রাজনার মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। ওই সময় রাজনার মরদেহের সঙ্গে চাচাতো ভাই সালমানও আসে। তখন সালমান অস্থিরতায় ভুগছিল। কথাবার্তা ও আচরণ সন্দেহজনক ছিল। ময়নাতদন্তের জন্য রাজনার মরদেহ ২৫০ শয্যা সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানেও সালমান ছিল। ময়নাতদন্তের পর তার জানাজা ও দাফনেও উপস্থিত ছিল সে।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজন কুমার দাশ বলেন, এটি একটি ক্লুলেস হত্যাকাণ্ড ছিল। সে জন্য সময় নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করা হয়েছে। প্রতিটি পদক্ষেপে পুলিশ গুরুত্বসহকারে ঘটনাস্থল স্বজন, এলাকাবাসী ও সন্দেহভাজনদের আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। গ্রাম্য বিরোধ, কোন্দল, পারিবারিক কলহ, জায়গা জমির বিরোধ, দুই জায়ের মধ্যে সম্পর্ক, দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক, চাচাতো ভাই-বোনের মধ্যে সম্পর্কসহ অনেক বিষয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণের পরে তাদের আটক করে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেই পুরো ঘটনা ও মোটিভ বের হয়ে আসবে। সালমানের একটি ইজিবাইক আছে।
রাজনা হত্যাকাণ্ডের পর ২৩ জুলাই তার বাবা বাদী হয়ে শান্তিগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। ২৬ জুলাই সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পাথারিয়া বাজারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়।