জমি থেকে পাট কাটছেন কৃষক মোশারফ। ছবি একুশে বিডি।
মাদারীপুরে পাটের বাম্পার ফলন হলেও পানির অভাবে জাগ দিতে পারছেন জেলার অন্তত দেড়লাখ চাষি। এতে লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে, পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে কেটে যাবে এই শঙ্কা।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, মাদারীপুরের মোস্তফাপুর ইউনিয়নের চতুরপাড়া এলাকার কৃষক মোশারফ মাতুব্বর ও হানিফ মাতুব্বর। দুই ভাই কয়েক যুগ ধরে পাট চাষ করে আসছেন। এবার পানির না থাকায় পাট নিয়ে দুঃচিন্তায় তারা। বাধ্য হয়ে পিকআপ ভাড়া করে কেন্দুয়া ইউনিয়নের ঘটকচরে পাট জাগ দেয়া শুরু করেছেন। সেখানেও পানির সংকট। এতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা পড়তে হচ্ছে তাদের। একই অবস্থা জেলার দেড় লাখের বেশি কৃষকদের।
প্রচণ্ড তাপদাহ ও বৃষ্টি না থাকায় খাল-বিল জলাশয় ও পুকুরের পানি কমে গেছে। পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন চাষিরা। হেক্টরের পর হেক্টর জমিতে দাঁড়িয়ে আছে পাটগাছ। অথচ পানি অভাবে কাটতে পারছেন না কৃষকরা। এক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতা ও সহযোগিতা না পাওয়া গেলে বড় ধরনের লোকসানের শঙ্কা চাষিদের।
চতুরপাড়া এলাকার কৃষক মোশারফ মাতুব্বর বলেন, এবার জমিতে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে জাগ দিতে পারছি না। এখন লোকসানের আশঙ্কা বাড়ছে।
কলাবাড়ি এলাকার কৃষক আকুব আলী হাওলাদার বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি না। কীভাবে হেক্টরের পর হেক্টর জমির পাট জাগ দিবে কৃষকরা? এবারও ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না অনেক কৃষক।
কলাগাছিয়া গ্রামের কৃষক দিপু হাজরা বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে কোন সহযোগিতা কেউ করে না। কোন লোকও আসেনা। পানির অভাবে পাট কাটতে পারছি না। অনেক অসুবিধা হচ্ছে।
শ্রীনদী গ্রামের কৃষক মজিবর হাওলাদার বলেন, মাঠে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় কাটাও হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে পচাতে পারছিনা। এখন দুঃচিন্তা বাড়ছে।
বাহাদুরপুর গ্রামের কৃষক অতুল হাজরা বলেন, খাল-বিল-পুকুর এমনকি জলাশয় কোথায়ও পানি নেই। মাঠ এখন শুকনো, তাই পাট কাটতে পারছি না। কৃষক বিভাগ থেকে একটু খোঁজখবর নেয়ারও লোক নেই।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিফতরের উপপরিচালক সন্তোস চন্দ্র চন্দ জানান, জেলার পাঁচটি উপজেলায় চলতি মৌসুমে
৩৫ হাজার ৮৮৬ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৭ হাজার ৮২৪ মেট্রিক টন। পাট পঁচাতে অপেক্ষা করতে হবে বৃষ্টির জন্য। বৃষ্টি হলেই দুঃচিন্তা কেটে যাবে চাষিদের। এছাড়া বিকল্প পদ্ধতিতে পাট পচানোর জন্য চাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।