অজ্ঞাতপরিচয় নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে। ছবি সংগৃহীত।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে রাস্তার পাশের একটি আম বাগান থেকে ৩৫ বছর বয়সী এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকালে উপজেলার ১নং বুলাকীপুর ইউনিয়নের হরিপাড়া-বলগাড়ী রাস্তার পাশে মোজাম্মেল হকের আমবাগানে ওই নারীর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেন স্থানীয়রা।
পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ নিজেদের হেফাজতে নেন। তবে প্রাথমিকভাবে নিহত ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। নিহতের পরিচয় শনাক্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফরেনসিক ইউনিট হাতের আঙুলের ছাপ ও অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করেছে বলে জানিয়েছেন ঘোড়াঘাট থানার ওসি আসাদুজ্জামান আসাদ। ঘটনার পরপরেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঘোড়াঘাট-হাকিমপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলাম।
সুরতহাল রিপোর্ট অনুযায়ী নিহত ওই নারীর গলায় রশি জাতীয় জিনিসের দাগ রয়েছে বলে জানান পুলিশ। তাদের ধারণা গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়েছে ওই নারীকে। শুক্রবার বিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ দিনাজপুর এম.আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।
এরআগে গত বছরের ১০ আগস্ট স্থানীয় মোজাম্মেল হক মোজামের আমবাগানে তৈরি করা কথিত বিনোদন কেন্দ্রের আবাসিক রুম থেকে ওই পার্কের নৈশপ্রহরীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই ঘটনায় নিহতের পরিবারের করা হত্যা মামলায় পার্ক মালিক মোজাম ও তার জামাতা সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। সেই মামলায় জামিনে বেরিয়ে আসেন আসামিরা। ওই ঘটনার এক বছর অতিবাহিত না হতেই একই মালিকের মাত্র সাড়ে ৩০০ গজ দূরত্বে অবস্থিত আরও একটি আমবাগান থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করল পুলিশ। তবে ওই পার্কের মালিক বিনোদনকেন্দ্রে অসামাজিক কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ৩ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে দিনাজপুরের কারাগারে রয়েছে।
তবে বছর ছুঁই ছুঁই হলেও ওই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। মাঝে দুইবার পরিবর্তন হয়েছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও)।
শুক্রবার নারীর মরদেহ দেখতে পাওয়ার পর আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের শতশত নারী-পুরুষ সেখানে ভিড় জমায়। সেখানে তারা পার্ক ও বাগান মালিক মোজাম এবং তার পরিবারের সদস্যদের শাস্তির দাবিতে হই-হুল্লোড় শুরু করে।
তাদের অভিযোগ মোজাম্মেল হক দীর্ঘদিন ধরে বিনোদনকেন্দ্রের আড়ালে প্রকাশ্য যৌনবৃত্তির ব্যবসা করে আসছে। পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রায় দুই ডজন অভিযানে বেশ কয়েকবার জেলে গেছে মোজাম, তার জামাতা এবং পার্কের কর্মচারীসহ কয়েক ডজন নারী। তবে কোনোভাবেই দমানো যাচ্ছিল না মোজামকে। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি আবারও সেই যৌনবৃত্তির ব্যবসা চালু করেন।
স্থানীয় বিষু সরকার বলেন, ‘আমাদের গ্রামে আগে কখনও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। মোজাম পার্ক চালু করার পর থেকেই পরপর দুটি মার্ডার হলো। এরআগে পার্কের রুমের ভেতরেই একজনকে কে বা কারা হত্যা করেছিল।’
সংশ্লিষ্ট বুলাকীপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) সামসুল হক বলেন, ‘দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আসল রহস্য উন্মোচন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাচ্ছি। একই এলাকায় কেন বারবার এমন ঘটনা ঘটছে! এসব গভীরভাবে খতিয়ে দেখা দরকার।
ঘোড়াঘাট-হাকিমপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আজকের এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মোটিভ আমরা খোঁজার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি কারা এর সঙ্গে জড়িত সেটি শনাক্তে আমরা সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। প্রয়োজন অনুযায়ী প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। নিহতের পরিচয় শনাক্তের মাধ্যমে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, কয়েকমাস আগে পার্কের ভেতরে যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেই মামলার তদন্ত কার্যক্রমও চলমান আছে। ওই মামলার আসামিরা আদালত থেকে জামিনে আছে। দুটি ঘটনাতেই জড়িতদের বেঁচে যাবার কোনো সুযোগ নেই।’