উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকার পরও কলেজ শিক্ষার্থী মো. আশ্রাফুল হাওলাদারকে গ্রেফতারে বিষয়ে হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া পটুয়াখালী থানার দুই কর্মকর্তার আদেশ ১৩ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত। রোববার (৩০ জুলাই) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের দ্বৈত বেঞ্চ এ তারিখ ঘোষণা করেন।
এর আগে গত ২৪ জুলাই এ বিষয়ে আজ রোববার সিদ্ধান্ত দেবার কথা ছিল হাইকোর্টের। গত ২৩ জুলাই জামিনে থাকার পরও ওই কলেজ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতারের ঘটনায় পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) দুই পুলিশ কর্মকর্তা আদালতের একই বেঞ্চে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
ওইদিন আদালতে আশ্রাফুল হাওলাদারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা। দুই পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবু রেজা মো. কাইয়ুম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
গত ২০ মে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘জামিন নেয়া শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, পটুয়াখালী সদর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেয়া কলেজ শিক্ষার্থী মো. আশ্রাফুল হাওলাদারকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানোর অভিযোগ ওঠে। গত ১৮ মে রাতে আসামিকে তার বাড়ি থেকে ধরে এনে পরের দিন (১৯ মে) সকালে আদালতে পাঠানো হয়। এ সময় পুলিশকে হাইকোর্টের জামিনের কপি দেখালেও তারা তা আমলে নেননি বলে দাবি আসামির পরিবারের।
পরিবারের অভিযোগ,তাকে ধরার পর পুলিশ মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। তা দিতে না পারায় পুলিশি ক্ষমতার বলে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। যদিও হাইকোর্টের জামিননামা দেখে শুক্রবার দুপুরে আসামিকে ছেড়ে দেন পটুয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামাল হোসেন।
আশ্রাফুল হাওলাদার পটুয়াখালী সদর উপজেলার মরিচবুনিয়া ইউনিয়নের বাজারঘোনা গ্রামের আব্দুল লতিফ হাওলাদারে ছেলে। এ ঘটনায় ক্ষোভ জানায় জেলা আইনজীবী সমিতি।
আশ্রাফুলের চাচা রাজা মিয়া বলেন, ১৮ মে সদর থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মিজানুর রহমান আশ্রাফুলকে গ্রেফতার করেন। তার পরিবার ওই রাতে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আলী আহসান মোল্লার স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র ও জামিননামার অনলাইন কপি দেখায় পুলিশকে।
এ প্রসঙ্গে এএসআই মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি ওয়ারেন্ট অনুযায়ী আসামিকে গ্রেফতার করেছি। এরপর আশ্রাফুলের পরিবার ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ওসি স্যার কাগজপত্র দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ পরে জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনটি ২১ মে হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা।
এরপর আদালত পটুয়াখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মিজানুর রহমানকে তলব করেন।
সে অনুসারে তারা ১৮ জুন আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। আদালত ২৩ জুলাই ফের তাদের আসতে বলেন। আর আশ্রাফুল হাওলাদারের আইনজীবীকে বলেছিলেন বিটিআরসির কাছ থেকে ফোন কলের রেকর্ড নিয়ে আসতে। তারই রাবাহিকতায় ২৩ জুলাই শুনানির শুরুতেই দুই পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে ফের নিঃশর্ত ক্ষমা চান তাদের আইনজীবী আবু রেজা মো. কাইয়ুম খান।
তিনি বলেন, হাইকোর্ট থেকে মো. আশ্রাফুল হাওলাদারের জামিন পাওয়ার বিষয়টি তারা জানতেন না। আসামিরা জামিননামা দেখাননি, আইনজীবীর প্রত্যয়নও দেখানো হয়নি। এমনকি কোর্টে হাজির করার সময়ও কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এ গ্রেফতার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল না। ‘আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাই।’
তখন ফোন কলের বিষয়ে জানতে চেয়ে আদালত বলেন, (গ্রেফতারের সময় পুলিশ সদস্যরা) টেলিফোনে কথা বলে নাই? আইনজীবী (আলী আহসান মোল্লা) তো বলেছিলেন তিনি ফোনে কথা বলেছেন। ওই সময় আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা বলেন, বিটিআরসির কাছে কল রেকর্ড চেয়ে আবেদন করেছিলাম। তারা কোর্টের আদেশ ছাড়া দেবে না। বিটিআরসি বলেছে, কোর্টের আদেশ পেলে দেবে। এ কথা জানার পর আদালত বলেন, ‘আগামীকাল (সোমবার ) ফোন কল রেকর্ডের বিষয়ে হলফনামা (আবেদন) নিয়ে আসেন। আমরা রেকর্ড কল পরীক্ষা করবো।’
এ সময় দুই পুলিশ কর্মকর্তার আইনজীবী তাদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি চাইলে আদালত বলেন, ‘আসতে হবে।’