টিসিবির পণ্য নিচ্ছেন একজন ফ্যামিলি কার্ডধারী। ছবি সংগৃহীত
তথ্য যাচাই-বাছাই করে এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডকে স্মার্ট করছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এসব কার্ড কোনোভাবেই নকল করা সম্ভব নয় বলে দাবি করছে এ কার্ড তৈরির দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রাম আইটি সলিউশন লিমিটেড। কিন্তু তাতেও যে থেকে যাচ্ছে অসঙ্গতি!
অনুসন্ধান বলছে, এনআইডি ব্যবহার করেও একই পরিবার পাচ্ছে একাধিক ফ্যামিলি কার্ড।
এখন আর কম দামে পণ্য কিনতে ঘুরতে হয় না টিসিবি’র ট্রাকের পেছনে। সুবিধাভোগীরা এটুকু নিশ্চিত যে, ফ্যামিলি কার্ড থাকা মানে বরাদ্দ মতো তার পণ্যও রয়েছে ডিলারের কাছে। এ বিষয়ে এক ফ্যামিলি কার্ডধারী বলেন, আগের তুলনায় কম ভোগান্তিতে টিসিবির পণ্য হাতে পাচ্ছি।
এবার এ বিক্রি কার্যক্রমকে আরও স্বচ্ছ করতে এক কোটি ফ্যামিলি কার্ড স্মার্ট করার উদ্যোগ নিয়েছে টিসিবি। সংস্থাটির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান বলেন, ‘তিনটি জায়গা ব্যতীত বাকি জায়গা যেহেতু হাতে-কলমে ছিল, সেহেতু সেখানে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ছিল। কিন্তু সেগুলো বর্তমানে স্মার্ট কার্ড করার মাধ্যমে সমন্বয় করার একটি পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে, যেটিকে বলা হচ্ছে ফাইন টিউনিং।’
স্পেকট্রাম আইটি সলিউশনের দাবি, ছবিযুক্ত এ কার্ডে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা নকল করে সুবিধা নিতে গেলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধরা পড়ে যাবে। তাদের লক্ষ্য, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২০ লাখ কার্ড বিতরণ।
স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য
স্পেকট্রাম আইটি সলিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই কমপক্ষে প্রথম ধাপে ২০ লাখ কার্ড সরবরাহ করা হবে। এ কার্ডে সিকিউরিটি হলোগ্রাম ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া এতে কিউআর কোর্ড রয়েছে, সেখানেও সিকিউরিটি হলোগ্রাম দেয়া হয়েছে। এ কাজটি টেকনিক্যালি এমনভাবে করা হয়েছে যে, কেউ নকল করলেই ধরা পড়বে।
যে কেউ একই তথ্য বার বার ব্যবহার করে কারসাজি করার চেষ্টা করলে ধরা পড়বেন, এমনটাই জোর দিয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ যদি একই ডাটা বার বার দিতে চান, তাহলে সিস্টেম তাকে চিহ্নিত করে শ্রেণিবদ্ধ করবে। কেউ এটি নকল করতে পারবেই না; বরং কেউ কত বার সেই জালিয়াতি করার চেষ্টা করেছে, সেই তথ্যও পাওয়া যাবে।
স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের ডিজাইন। ছবি
যেন একই পরিবারে একাধিক কার্ড না যায়, সে জন্য কার্ডের প্রাথমিক ডিজাইনে দেখা যাচ্ছে, সুবিধাভোগীর নাম, মোবাইল ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরের পাশাপাশি রাখা হচ্ছে স্বামী বা পিতার নাম, যাদের এনআইডির তথ্য থাকবে মূল সার্ভারে।
টিসিবির চেয়ারম্যান বলেন,
‘আমরা কয়েকটা ধাপে ধাপে এই কার্ডগুলো পরীক্ষা করবো। আমরা আমাদের ডাটাবেইজে এনআইডির ডাটা ব্যবহার করবো। এক্ষেত্রে একই পরিবারের দুজনের কার্ড পাওয়া গেলে তা চিহ্নিত করা হবে।’
তাহলে সত্যিই কি এক পরিবারে একাধিক কার্ড রাখা সম্ভব নয়?
ঢাকা দক্ষিণের একটি ওয়ার্ডে আকস্মিক অনুসন্ধানে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। সেখানে চারটি ফ্যামিলি কার্ড নিয়ে পণ্য নিতে এসেছেন মাকসুদা বেগম নামে একজন সুবিধাভোগী। তার পিতার নাম আবদুল রহিম পাইন। মাকসুদার সঙ্গে থাকা তার মেয়ে ফাহিমা ও বিবাহিত আরেক মেয়ে জেসমিন আক্তারেরও ফ্যামিলি কার্ড রয়েছে, যারা ব্যবহার করেছেন তাদের বাবার নাম, মানে মাকসুদার স্বামীর নাম। জেসমিন আক্তারের স্বামী রুবেলের নামেও কার্ড রয়েছে; যার বাবার নাম রবি মিয়া।
মাকসুদা বেগমের কাছে থাকা ৪টি ফ্যামিলি কার্ড। ছবি:
এ বিষয়ে মাকসুদা বেগম বলেন, মাকসুদা নামে যে কার্ডটি রয়েছে সেটি আমার। ফাহিমা হচ্ছে আমার মেয়ে, সে আমার সঙ্গে থাকে।
টিসিবি’র নতুন সিস্টেমে একই এনআইডি দুবার ব্যবহার করায় ফাহিমা বা জেসমিন; যে কোনো একজনের কার্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে। তারপরও দুই পরিবারে টিকে যাবে ৩টি কার্ড। যা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায় এক পরিবারের এক কার্ডের নীতিকে।
টিসিবির নতুন সিস্টেমেও মাকসুদা বেগমের পরিবারের কাছে ৩টি কার্ড থেকে যাবে। ছবি
একইভাবে একাধিক কার্ড টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সৈয়দী নামের আরেক সুবিধাভোগীর পরিবারে। তার কাছে ৪টি ফ্যামিলি কার্ড থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে ৩টি কার্ড আমার ছেলেদের। আমাদের পরিবারে ৪টি কার্ড রয়েছে। আমার ৩ ছেলের আর আমার।
কাজেই এই তথ্য দুর্নীতি থেকে বাঁচার উপায় কী? টিসিবি বলছে, ধীরে ধীরে একটি পরিবারভুক্ত সকলের তথ্যই কার্ডে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবছে সংস্থাটি।
টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান বলেন, ‘আমাদের নতুন যে স্মার্ট কার্ডটি হচ্ছে, সেটিতে যতটুকু সম্ভব আমরা তথ্য দিতে পারব। ফলে একটি পরিবারে কয়েক জন আছে; পরিবারের সদস্য সংখ্যা কত; প্রত্যেকের যদি এনআইডি থাকে তাহলে এনআইডি নম্বর ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। তাতে করে একটি পরিবারের যে কয়েকজন সদস্য রয়েছে, তারা আবার অন্য জায়গা থেকে অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে কি না, সেটিও এটির মাধ্যমে বের করা সম্ভব হবে।’
তাছাড়া কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ তৈরিতে ভুল তথ্য দিলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলেও সতর্ক করেছে টিসিবি। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশাসনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।