বাসমতি চালের রফতানি নিষেধাজ্ঞার আসায় আশঙ্কা অগ্রিম চালান চান ক্রেতারা। ছবি
সম্প্রতি বাসমতি ছাড়া অন্য সব ধরনের চাল রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে দেশটি বাসমতি চালের রফতানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে, এমন আশঙ্কায় ভারতীয় চাল রফতানিকারকদের কাছে অগ্রিম বাসমতি চালের চালান সরবরাহের অনুরোধ করছেন বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমন তথ্যই জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে গত ২০ জুলাই বিশ্বের বৃহত্তম এই চাল রফতানিকারক দেশ বাসমতি ছাড়া অন্য সব চাল রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মূলত ভারতের উত্তরাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে পাঞ্জাব ও হরিয়ানাসহ কয়েকটি রাজ্যের নতুন রোপণ করা বেশ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে করে চালের বাজারে ঘাটতির শঙ্কায় দেশটির খুচরা বাজারে মাস ব্যবধানে দাম ৩ শতাংশ বেড়ে যায়। তাই অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে এমন সিদ্ধান্ত নেয় ভারত।
দেশটির বাসমতি চালের অন্যতম রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান জিআরএম ওভারসিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অতুল গর্গ বলেন, ভারত সরকার বাসমতি চাল রফতানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ক্রেতারা। সেই নিষেধাজ্ঞা এড়াতে তারা অগ্রিম চাল সরবরাহ করার জন্য বারবার অনুরোধ করছেন।
সাধারণত ক্রেতারা প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে চাল সরবরাহের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করে থাকেন উল্লেখ করে অতুল গর্গ বলেন, কিন্তু নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় এখন তারা সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের চালের চালান আগস্ট মাসেই পাঠাতে বলছেন।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারত প্রায় ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন বাসমতি চাল রফতানি করেছে। দেশটির বাসমতি চালের র্শীষ ক্রেতার মধ্য রয়েছে সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর বাসমতি ছাড়া যেসব চাল রফতানির ওপর দেশটি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেসব চালের ক্রেতা মূলত বাংলাদেশ, সেনেগাল, বেনিন, টোগো এবং কোট ডি’আইভরি।
রয়টার্স জানিয়েছে, এর আগে ভারত কখনো বাসমতি চাল রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। কিন্তু ২০০৮ সালের রফতানি কর আরোপ করেছিল।
তাই এই চাল রফতানির ওপর ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা দেবে না বলেই মনে করেন রফতানিকারকরা। এবিষয়ে নয়াদিল্লির এক রফতানিকারক বলেন, আমরা ক্রেতাদের বারবার আশ্বস্ত করছি যে বাসমতি চালের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো শঙ্কা নেই। কিন্তু ক্রেতারা তাতে আশ্বস্ত হচ্ছেন না।
বাসমতি চাল প্রধানত ভারতের উত্তরের রাজ্য পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ এবং হিমাচল প্রদেশে উত্পাদিত হয়। কিন্তু সেই প্রদেশগুলোতে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে এই বছর বন্যা দেখা দেয়।
এবিষয়ে বিজয় সেটিয়া নামের এক চাল রফতানিকারক বলেন, বন্যার পরও গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বাসমতি চালের উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ অন্যসব চালের তুলনায় বাসমতির দাম বেশি। তাই উত্তর প্রদেশের কৃষকরা এটি রোপনের দিকে ঝুঁকছেন।
এর আগে গত ২৬ জুলাই পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার শস্য রফতানি চুক্তি বাতিল কিংবা ভারতের চাল রফতানি নিষেধাজ্ঞায় শঙ্কার কোনো কারণ নেই। দেশে খাদ্যশস্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।
তথ্য বলছে, আগে বাংলাদেশ ২২ থেকে ২৫ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করলেও এখন তা ৮ থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ জুলাই পর্যন্ত বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৫৮ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ধান এবং ৮ লাখ ৮৩ হাজার ২৯৪ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।