পাট জাগ দিতে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত অর্থায়নে উপজেলার গাজনা ইউনিয়নের চন্দনা-বারাশিয়া নদীর সংযোগ খাল মান্দারতলা ব্রিজ থেকে চত্রাবিল পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার জুড়ে ১৫টি স্যালো মেশিন দিয়ে একযোগে পানি দেয়ার কাজের উদ্বোধন করছেন মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান চৌধুরী। ছবি সংগৃহীত
সোনালী আশ পাটের জন্য বিখ্যাত ফরিদপুর। দেশের দ্বিতীয় পাটের রাজধানীও বলা হয়ে থাকে এ জেলাকে। এবছর তীব্র তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে নদ-নদী, খাল-বিল, ডোবা-নালায় পানি শূন্য রয়েছে। পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছেন না জেলার চাষিরা।
পাট চাষিদের কথা চিন্তা করে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার গাজনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া।
মঙ্গলবার (০১ আগস্ট) ব্যক্তিগত অর্থায়নে উপজেলার গাজনা ইউনিয়নের চন্দনা-বারাশিয়া নদীর সংযোগ খাল মান্দারতলা ব্রিজ থেকে চত্রাবিল পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার জুড়ে ১৫টি স্যালো মেশিন দিয়ে একযোগে পানি দেয়ার ব্যবস্থা করেন ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া।
সকাল সাড়ে ১০টায় চন্দনা-বারাশিয়া নদী সংলগ্ন মথুরাপুর মাঠে এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান চৌধুরী। এসময় গাজনা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া, ইউপি সদস্য মো. অলেমান বিশ্বাস, মো. আলীম মোল্যা, সংরক্ষিত সদস্য রাবেয়া বেগম, সাবেক ইউপি সদস্য মো. আ. রশিদ শেখ, ইউপি সচিব অনন্ত কুমার বিশ্বাস, উদ্যোক্তা অমিত কুমারসহ স্থানীয় চাষি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
গাজনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া বলেন, শত শত একর জমির পাট ক্ষেতগুলোতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ক্ষেতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। নদ-নদী, খাল-বিলে পানি না থাকায় চাষিরা পাট কাটছে না, আবার কেউ কাটলেও বাধ্য হয়ে ক্ষেতেই রাখতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কৃষকদের কথা চিন্তা করেই নিজস্ব অর্থায়নে পানি দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। এই জায়গাটুকু পানি দিয়ে পরিপূর্ণ করা হবে। পরিপূর্ণ করতে যে কয়দিন মেশিন চালাতে হবে, সেই কয়দিনই চালানো হবে। প্রায় এক হাজার চাষি তাদের পাট জাগ দিতে পারবে।
গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজ করেন। কৃষি থেকে আয়ের ওপর তাদের সংসার চলে। একারণে এই উদ্যোগ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো। ইউনিয়নবাসীর সুখে দুঃখে পাশে ছিলাম, আগামীতেও তাদের পাশে থাকব।’
ইউপি চেয়ারম্যানের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন চাষিরা। স্থানীয় চাষি আকরাম হোসেন বলেন, ‘আমরা পাট জাগ দেয়া নিয়ে খুবই চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম। চেয়ারম্যান আমাদের কথা চিন্তা করে খালে পানি দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন, আমরা সকলেই খুবই আনন্দিত। শুধু আমি একাই নই এই খালে প্রায় এক হাজার চাষি তাদের পাট জাগ দিতে পারবে।’
মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘ফরিদপুর জেলা পাটের জন্য বিখ্যাত। এ পাট থেকে সুতাসহ পাট পণ্য বিদেশে রফতানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। ফরিদপুর জেলার ব্রান্ড হচ্ছে পাট। এবছর তীব্র তাপদাহ এবং অনাবৃষ্টির কারণে খাল বিলে পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে চাষিদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া আমাকে ফোনে জানান, খালে যে সকল চাষি পাট জাগ দিয়েছে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় পাট কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। এছাড়াও অনেক চাষি তাদের পাট জাগ দিতে পারছে না, আমি নিজস্ব উদ্যোগে পানির ব্যবস্থা করতে চাই। চেয়ারম্যানের এ কথা শুনে তাকে আমি এ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সাধুবাদ জানাই। প্রত্যেক জনপ্রতিনিধিকে এভাবেই জনগণের পাশে দাঁড়ানো উচিত। এ উদ্যোগ গ্রহণে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।’