আলোচিত তোশাখানা মামলায় পিটিআই নেতা ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড ওপাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় শনিবার (৫ আগস্ট) তাকে ৩ বছরের কারাদণ্ডের রায় দেন আদালত। রাজনীতিতে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় শনিবার (৫ আগস্ট) তাকে ৩ বছরের কারাদণ্ডের রায় দেন আদালত।
এছাড়া তাকে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ থেকে ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। এর পরপরই লাহোরের জামান পার্কে তার নিজ বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে তাকে ইসলামাবাদ নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক ইমরান খান। গত বছরের এপ্রিলে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের মধ্যদিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরপরই তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তার মধ্যে রাষ্ট্রীয় উপহারের মালামাল বিক্রির অভিযোগ অন্যতম। যাকে তোশাখানা দুর্নীতি বলা হচ্ছে।
তোশাখানা এমন একটি ভান্ডার যেখানে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান উপহার সামগ্রী সংরক্ষিত থাকে। কোন দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান বা খ্যাতিমান ব্যক্তিদের দেয়া উপহার সামগ্রী এই তোশাখানায় সাজিয়ে রাখা হয়।
সেসব উপহার সামগ্রীর মধ্যে থাকে দেশি বা বিদেশি তৈজসপত্র, স্মারক মুদ্রা, বিভিন্ন ধরনের স্মরণিকা, মহান ব্যক্তির প্রতিকৃতি অথবা আলোকচিত্র, শিল্পকর্ম, লোকশিল্প বা হস্তশিল্পের নমুনা।
৭০ বছর বয়সি এই রাজনীতিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বিভিন্ন দেশ সফরকালে পাওয়া রাষ্ট্রীয় উপহার সামগ্রী ব্যক্তিগতভাবে কিনে নেয়া ও সেগুলো বিক্রি করে দেয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তিনি।
তবে শুরু থেকেই এমন অভিযোগ নাকচ করে আসছেন ইমরান খান। প্রায় ১৪ কোটি পাকিস্তানি রুপির উপহার সামগ্রীর মধ্যে ছয়টি রোলেক্স ঘড়িসহ ৭টি হাতঘড়ি, একটি দামি কাফলিঙ্ক, একটি কলম ও একটি আংটি রয়েছে।
এই অভিযোগে গত বছরের আগস্টে ইমরান খানের বিরুদ্ধে একাটি মামলা দায়ের করে পাকিস্তান মুসলিম লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট। মামলায় বলা হয়, ইমরান খান তোশাখানা থেকে যে উপহারগুলো কিনেছিলেন, নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া সম্পদ বিবরণীতে তার তথ্য ‘ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন’ করেছেন।
এই অভিযোগে একটি তদন্তের পর গত বছরের ২১ অক্টোবর রায় ঘোষণা করে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। যাতে ইমরান খানকে ৫ বছরের জন্য রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয়। নির্বাচন কমিশন এরপর মামলাটি ইসলামাবাদের সেশন্স কোর্ট তথা দায়রা জজ আদালতে পাঠায়।
সেশন্স কোর্ট গত ১০ মে পিটিআই চেয়ারম্যানকে অভিযুক্ত করে ও মামলাটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ ঘোষণার আবেদন খারিজ করে দেয়। তবে ৪ জুলাই, ইসলামাবাদ হোইকোর্ট সেশন্স কোর্টের রায় বাতিল করে এবং মামলা পুনরায় শুনানি করতে এবং সাত দিনের মধ্যে বিষয়টির সিদ্ধান্ত জানানোর নির্দেশ দেয়।
অবশেষে শনিবার (৫ আগস্ট) তোশাখানা মামলায় পিটিআই চেয়ারম্যানকে দোষী সাব্যস্ত করে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও রাজনীতিতে ৫ বছরের জন্য ‘নিষিদ্ধ’ বা ‘অযোগ্য’ করে রায় দেন সেশন্স কোর্টের বিচারক হুমায়ুন দিলাওয়ার। সেই সঙ্গে ১ লাখ রুপি জরিমানা করেন তিনি। এরপরই ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়।
তবে পিটিআই চেয়ারম্যান এরই মধ্যে হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ চেয়ে মামলাটি অন্য আদালতে স্থানান্তরের আবেদন করেছেন। এরপরও যদি এই রায় বহাল থাকে, তাহলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না ইমরান খান।