ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ছবি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় স্ত্রী সুমা আক্তারকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে স্বামী রাসেল মিয়াকে (৪৩) মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন জেলা দায়রা ও জজ আদালত।
সোমবার (০৭ আগস্ট) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শারমিন নিগার এ দণ্ডাদেশ দেন। পাশাপাশি তাকে আরও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত রাসেল জেলার কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পলাতক রাসেল।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল আলম খোকন।
আদালতে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদন ও নথিপত্র থেকে জানা যায়, গত ২০১৩ সালে কুটি ইউনিয়নের রামপুরের কুদ্দুস মিয়ার ছোট মেয়ে সুমা আক্তারকে (২৫) রাসেল মিয়ার সঙ্গে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের সময় অটোরিকশাসহ এক লাখ ২০ হাজার টাকার মালামাল ও এক ভরি ওজনের সোনার চেইন যৌতুক বাবদ দেয়া হয়। এরপর তাদের সংসারে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান জন্ম নেয়।
রাসেল মিয়া বিভিন্ন সময় বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে সুমাকে চাপ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে নানা সময়ে পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। এক পর্যায়ে সুমা বাবার বাড়িতে চলে যায়। ২০১৫ সালের ৩১ মে রাসেলকে তালাক দেয় সুমা। এরপর থেকেই ক্ষুব্ধ ছিল রাসেল। ২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর সন্ধ্যার পর নিজ বাবার বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করে একঘর থেকে পাশের ঘরে যাওয়ার সময় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা রাসেল এলোপাতাড়ি কুপিয়ে সুমাকে রক্তাক্ত করে পালিয়ে যায়।
পরে তার চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা সুমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা সুমাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে মারা যাওয়ার আগে সুমা হামলাকারী হিসেবে রাসেলের নাম বলে যায়।
এ ঘটনা পরদিন সুমার বাবা বাদী হয়ে কসবা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বেলাল হোসেন একই বছর ডিসেম্বরে রাসেলকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সুমা তালাক দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাসেল তাকে হত্যা করেন। সব সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আজ সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার রাসেলকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। আদেশে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতসহ আরও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে হত্যাকাণ্ডের পর থেকে রাসেল পলাতক থাকায় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছাড়া আসামিপক্ষের নিয়োজিত কোনো আইনজীবী কেউ ছিলেন না।
জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল আলম খোকন জানান, সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। এ রায়ে মধ্য দিয়ে সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হলো।