মাহে আলম। ছবি: সংগৃহীত
বাগেরহাটের মোংলায় মরদেহ শনাক্ত করা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি! এতে চিলা গ্রামের জেলে হিলটন নাথ (খ্রিষ্টান) হিসেবে কবর দেয়া নিখোঁজ ব্যবসায়ী মাহে আলমের মরদেহটি।
গত পহেলা আগস্ট ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি’র পরীক্ষক মোহাম্মাদ নাজমুল আলম টুটুলের স্বাক্ষর করা রিপোর্টের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
কবর থেকে মরদেহ তুলে ইসলাম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মরদেহ দাফনের জন্য আদালতে আবেদন করবে মাহে আলমের পরিবার। অন্যদিকে, হিলটনকে খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছে তার পরিবার।
মাহে আলম (৫৭) মোংলা পৌর শহরের বাতেন সড়ক এলাকার মৃত মুন্সী মো.হাবিবুল্লার ছেলে। তিনি মাছের ব্যবসা করতেন। অন্যদিকে হিলটন নাথ উপজেলার চিলা গ্রামের মিটু নাথের ছেলে। তিনি পশুর নদী ও সুন্দরবনে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
মাহে আলমের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১০ এপ্রিল সকাল ৯টায় ব্যবসায়ী মাহে আলম মোংলা বাজারে যাওয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হলে নিখোঁজ হন। পরে তার ছেলে সুমন রানা ১৪ এপ্রিল মোংলা থানায় নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
মাহে আলম নিখোঁজের পর ১৩ এপ্রিল রাতে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র থেকে অর্ধ গলিত একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ হিলটনের পরিবারের দাবি অনুযায়ী উদ্ধার হওয়া মরদেহটি তাদের কাছে হস্তান্তর করে।
খ্রিষ্ট রীতি অনুযায়ী হিলটনের পরিবার মোংলা উপজেলার পশ্চিম চিলা গ্রামে ১৫ এপ্রিল মরদেহটির শেষকৃত্যও করেন। ওই ঘটনায় দাকোপ থানায় হত্যা ও লাশ গুম করার অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন হিলটন নাথের মা বীথিকা নাথ।
এর মধ্যে নিখোঁজ ব্যবসায়ী মাহে আলমের পরিবারও মরদেহটি মাহে আলমের বলে দাবি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দাকোপ থানা আদালতে ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন জানায়। খুলনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ‘গ’ অঞ্চল খুলনার আদেশে গত ৯ মে ঢাকার সিআইডি ল্যাবে হিলটন নাথের মা বীথিকা নাথ ও মাহে আলমের ছোট ছেলে সুমন রানা নমুনা দেন।
প্রকাশিত ডিএনএ রিপোর্টে বলা হয়, অজ্ঞাত মৃতদেহের দাঁত থেকে একজন পুরুষের পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া যায়। পরীক্ষায় সূদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয় যে, অজ্ঞাত মরদেহটি বিথীকা নাথের জৈবিক সন্তানের নয়। অজ্ঞাত মৃতদেহটি সুমন রানার জৈবিক পিতার। এর মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া যায়, চিলা গ্রামে হিলটন নাথ হিসেবে কবর দেয়া মরদেহটি আসলে নিখোঁজ ব্যবসায়ী মাহে আলমের।
হিলটন নাথের ভাই সাগর নাথ বলেন, ‘৭ এপ্রিল আমি ও আমার ভাই হিলটন নাথসহ চারজন পশুর নদীতে মাছ ধরছিলাম। রাতে সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো.মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে বনরক্ষীরা আমাদের তিনজনকে বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জ কার্যালয়ে নিয়ে আটকে রাখেন।
‘এর মধ্যে আমার ভাই ছিল না। ভাই হিল্টন নাথের কথা জানতে চাইলে এসিএফ মো.মাহবুব হোসেন বলেন, পরে আনা হবে। আমাদের প্রচুর মারধর করে বনরক্ষীরা। পরের দিন (০৮ আগস্ট) সকালে আমাদের তিনজনকে আদালতে প্রেরণ করা হলেও, আমার ভাই হিলটন নাথকে আদালতে প্রেরণ করা হয়নি। পরবর্তীতে জানতে পারি, আমার ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং পারিবারিকভাবে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।’
এদিকে, ব্যবসায়ী মাহে আলমের ছেলে সুমন রানা বলেন, ‘আমার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার মরদেহ হিলটনের বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে, যা অনেক বড় অপরাধ। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে বিষয়টি এখন প্রমাণিত যে, কবর দেয়া মরদেহটি হিলটন নাথের নয়; আমার বাবা মাহে আলমের। প্রথমত, আদালত এবং প্রশাসনের মাধ্যমে মরদেহ উত্তোলন করে দ্রুত ইসলামী রীতি অনুযায়ী মরদেহ দাফন করতে চাই।’
হিলটন নাথের মা বিথীকা নাথের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাহে আলমের ছেলে সুমন রানাকে তার বাবার মরদেহ বুঝিয়ে দেয়া হবে। আর মাহে আলমকে পরিকল্পিত ভাবে খুন এবং লাশ গুম করার অভিযোগ থাকলে মাহে আলমের পরিবারের পক্ষ থেকে পৃথক মামলা করতে হবে।’
খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান বলেন, ‘মরদেহর পরিচয় সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। দাকোপ থানায় হিলটনকে হত্যা ও গুমের যে মামলা রয়েছে, তা নিয়ে পুলিশ আরও গভীরভাবে কাজ করবে। মাহে আলমকে হত্যা ও গুমের মামলা বাগেরহাট আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী চলবে।’