পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের ১১ কিলোমিটার সড়ক খানাখন্দে ব্যবহারের অনুপযোগী। ছবি
সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের বেলাভূমি সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় এক সময় ঢাকা থেকে সড়কপথে যেতে একাধিক ফেরি পার হতে হতো। এখন নদীতে সেতু হয়ে গেছে। সেতু চালু হওয়ার পর সাগরকন্যা কুয়াকাটার পরিচিতি ও গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। তবে সেতু পার হয়ে যে সড়ক দিয়ে কুয়াকাটায় যেতে হয়, তার বেহাল অবস্থা। পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের ৮১ কিলোমিটারের মধ্যে পাখিমারা বাজার থেকে আলীপুর পর্যন্ত দীর্ঘ ১১ কিলোমিটার সড়ক এখনও খানাখন্দে ব্যবহারের অনুপযোগী।
কুয়াকাটায় যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি। প্রতিদিন এ পথেই দেশি-বিদেশি হাজারো ভ্রমণপিপাসুরা কুয়াকাটায় আসেন। কুয়াকাটার মতো দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গে সংযুক্ত মহাসড়কের এ অবস্থা দেখে পর্যটকরাও হতবাক। তবে সম্প্রতি সড়ক সংস্কার নিয়ে আদালত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় দ্রুত সড়কটি সংস্কারের কথা জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।
পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ২০১১ সালে পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাখিমারা থেকে আলিপুর পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করে। সে সময় খুলনার রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ২০ কোটি টাকা চুক্তিতে কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিযুক্ত হয়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সড়কটি সংস্কারের পর চূড়ান্ত বিল দাবি করলে সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে ঠিকাদারকে ১২ কোটি টাকা পরিশোধ করেনি সওজ।
শিডিউলের শর্ত অনুযায়ী আবারও সংস্কারের জন্য বলা হলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করার বিষয়ে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করে সড়কের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগের সত্যতা পায়। এতে করে ঠিকাদারের চূড়ান্ত বিল পরিশোধে আপত্তি জানায় তদন্ত কমিটি।
এ পরিস্থিতিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের পরিচালক রাশেদুর রহমান ২০১৪ সালে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। এর প্রেক্ষিতে আদালত সড়কটির সংস্কার কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। আর এতেই সড়কটি দীর্ঘদিন যাবত সংস্কার করা হয়নি। এই বছরে ২৩ মার্চ হাইকোর্ট ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেন। বর্তমানে সড়কটি সংস্কার করে নির্মাণে আর কোন বাধা নেই।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মামলা চলমান থাকায় এই ১১ কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সংস্কার করতে পারেনি সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সংস্কার না করায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে গেছে। প্রতিদিন এই সড়কে ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। মাঝে মধ্যে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল উপযোগী রাখার চেষ্টা করলেও বর্তমানে আবারও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়সহ হাজারো পর্যটককে। তাই সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তারা।
ঢাকা আরামবাগ থেকে আসা এক পর্যটক বলেন, বাসা থেকে সকালে পরিবার নিয়ে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছি। পদ্মা সেতু পার হয়ে খুব সহজে এবং অল্প সময়ের মধ্যে কলাপাড়া পর্যন্ত এসেছি। কলাপাড়া আসার পরে কিছু দূর সড়কটি ভালোই ছিল, তারপরে সড়কটি এতো খানা খন্দে ভরা। কুয়াকাটা পর্যন্ত যেতে শরীর ব্যাথা হয়ে গেছে। তাই আমাদের দাবি সড়কটি তাড়াতাড়ি মেরামত করা হোক।
চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার রহমান বলেন, আমরা বন্ধুরা মিলে পিরোজপুরের বেকুটিয়া সেতুটি পার হয়ে মাত্র ৫ ঘণ্টায় কুয়াকাটা আসছি। গত তিন বছর আগে একবার এসেছিলাম তখন সময় লাগছে আট ঘণ্টা। অল্প সময়ের মধ্যে কুয়াকাটা ঠিকিই আসছি। কিন্তু কুয়াকাটার আগের ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার সড়কটির বেহাল অবস্থা। এ সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন সড়ক না করতে পারলেও সড়কটি দিয়ে যদি সড়ক ও জনপথ বিভাগ চলাচলের একটু ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে সাধারণ পর্যটকরা খুব সহজেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কুয়াকাটা আসতে পারবে।
ঢাকা থেকে কুয়াকাটাগামী পরিবহনের চালক মো. হানিফ গাজী বলেন, আমরা খুব সহজেই ঢাকা থেকে পর্যটক নিয়ে আসি। কিন্তু কুয়াকাটার এই ১১ কিলোমিটার সড়কে আমাদের গাড়ি চালাতে অনেক কষ্ট হয়।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পদক মো. মোতালেব শরীফ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হবার পরে আমাদের কুয়াকাটায় পর্যটক সংখ্যা বাড়ছে। পদ্মা সেতুর সুফলতা আমরা পেতে শুরু করছি। কিন্তু দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এই সড়কের ১১ কিলোমিটারের বেহাল অবস্থা। সড়কটি নতুন করে করা হয় অথবা সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করা হয় তাহলে আশা করি আমাদের পর্যটক আরও বাড়বে।
সম্প্রতি সড়ক সংস্কার নিয়ে আদালত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় দ্রুত সড়কটি সংস্কারের কথা জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাসুদ খান বলেন, সড়কটি সংস্কার নির্মাণের জন্য ডিপিপির ১৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগিরই এই সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হবে।